নেইমারদের কাঁদিয়ে সেমিতে বেলজিয়াম

ম্যাচের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত জমজমাট লড়াই হলো। পুরো ম্যাচ জুড়েই উভয় দলই একের পর এক আক্রমণে গিয়েছে। কিন্তু শেষ হাসি হেসেছে বেলজিয়াম। রাশিয়া বিশ্বকাপে শুক্রবার দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেল বেলজিয়াম। আর চোখের জলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলো নেইমার-কুতিনহো-জেসুসদের দল ব্রাজিল। আগামী ১০ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত বারোটায় বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচে ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নামবে বেলজিয়াম।

বিশ্বকাপে এবার দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে উঠল বেলজিয়াম। এর আগে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে তারা সেমিফাইনালে খেলেছিল। কিন্তু সেমিফাইনালে তারা আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল। অন্যদিকে, বিশ্বকাপে ব্রাজিল এবার টানা চতুর্থবারের মতো ইউরোপের কোনো দলের কাছে হেরে বিদায় নিলো। ২০০৬ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ফ্রান্সের কাছে হেরে ও ২০১০ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। এরপর ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল ম্যাচে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। আর এবার ইউরোপের আরেকটি দল বেলজিয়ামের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হলো ব্রাজিলের।

কাজানে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে উভয় দল। অষ্টম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো ব্রাজিল। গোলপোস্টের সামনে থেকে আলতো ছোঁয়ায় বল জালে পাঠাতে চেয়েছিলেন থিয়াগো সিলভা। কিন্তু বলটি সাইডবারে লেগে ফিরে আসে। বেঁচে যায় বেলজিয়াম।

এর পরপরই ব্রাজিলের আত্মঘাতী গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। ১৩তম মিনিটে আত্মঘাতী গোলটি করেন ফার্নান্দিনহো। কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা বল হেড করতে লাফ দিয়েছিলেন ফার্নান্দিনহো। কিন্তু তিনি ঠিক মতো হেড করতে পারেননি। বল তার বাহুতে লেগে চলে যায় জালে। ৩১তম মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনের গোলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। রোমেলু লুকাকুর কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সের প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত শটে গোলটি করেন ডি ব্রুইন। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বেলজিয়াম।

বিরতির পর ৫০তম মিনিটে মার্সেলোর ক্রস থেকে কুতিনহো বলে ঠিক মতো স্পর্শ করতে পারলে গোল যেতে পারতো ব্রাজিল। গোলপোস্টের সামনে তিনি বলের দিকে পা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। ৬৩তম মিনিটে ডগলাস কস্তার দ্রুতগতির একটি শট ডাইভ দিয়ে ঠেকিয়ে দেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক। ৭৪তম মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে দারুণ একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল ব্রাজিলের জন্য। কিন্তু বেলজিয়ামের গোলরক্ষক ও ডিফেন্ডাররা ব্রাজিলের এই চেষ্টাকে সফল হতে দেননি।

কিন্তু ৭৬তম মিনিটে ম্যাচে গোলের দেখা পায় ব্রাজিল। গোলটি করেন রেনাতো অগাস্টো। ৭৩তম মিনিটে পাওলিনহোর বদলে মাঠে নেমে ৭৬তম মিনিটে গোল করেন তিনি। কুতিনহোর ক্রস থেকে হেড করে বল জালে পাঠান অগাস্টো। ম্যাচের বাকি সময়ে কোনো দল গোল করতে না পারায় ২-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বেলজিয়াম। ম্যাচ সেরা হন বেলজিয়ামের কেভিন ডি ব্রুইন।

পুরো ম্যাচে অবশ্য বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। ৫৯ শতাংশ সময় ধরে তারা বল দখলে রেখেছিল। আর ৩১ শতাংশ সময় ধরে বল দখলে রেখেছিল বেলজিয়াম। ব্রাজিল টার্গেটে শট নিয়েছে নয়টি। আর বেলজিয়াম টার্গেটে শট নিয়েছে তিনটি।

দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে জাপানকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করেছিল বেলজিয়াম। আর রাউন্ড অব সিক্সটিনের ম্যাচে মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে ব্রাজিল। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ব্রাজিল দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে ও বেলজিয়াম তৃতীয় অবস্থানে থেকে এই ম্যাচটি খেলেছে।