সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে

নেত্রকোনার মদনে মুক্ত জলাশয় প্রভাবশালীদের দখলে

নেত্রকোনার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের হেরনবিল মগড়া নদীর সংযোগ ধলাই নদীসহ উপজেলার বিভিন্ন মুক্ত জলাশয়ে বাশেঁর ভায়না ফেলে বাঁধ দিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ নিধন করায় অসহায় হয়ে পড়েছে জেলে সম্প্রদায় ও কৃষক। ফলে নদী ও মুক্ত জলাশয় গুলো কার্যকারিতা হারাচ্ছে অপর দিকে দরিদ্র জনগণ এর সুফলতা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

এলাকার অসাধু প্রভাবশালীরা মসজিদ মাদ্রাসার নাম ভাঙিয়ে মুক্ত জলাশয়গুলো দখলে নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। দখলদারদের কবলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে জলাশয়, খাল-বিলের নালা ও নদীর তীর। কর্তৃপক্ষের নজর না থাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী জীবিকা নির্বাহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মোয়াটি গ্রামের ছাতু মাস্টার জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসের অফিস সহকারি মোঃ সাইদুরেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে হেরন বিলে মাছ ধরছি । মৌখিকভাবে আমাদেরকে দিয়েছে কিন্তু কোন কাগজপত্র দেয়নি। প্রতিবারই তার কাছ থেকেই টাকা দিয়ে আমরা বিল নিয়ে থাকি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফতেপুর গ্রামের একজন জানান ফতেপুর ছত্রকোনার পিছনে ধলাই নদীর শাখা উপজেলা নির্বাহী অফিসের সিইও সাইদুর কে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য মাছ ধরার মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসের অফিস সহকারী সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

অন্যদিকে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত, বন্যাপরবর্তী পরিস্থিতি এবং দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষা নিয়ে নানা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সচেতমহল।

উপজেলার তিয়শ্রী,মদনসদর,চানঁগাও, ফতেপুর,নায়েকপুর, মাঘান, গোবিন্দশ্রী,কাইটাইল ইউনিয়নের মুক্ত জলাশয় মগড়া, শাখা নদী ধলাই, হেরনবিল,মরানদী, কাঁঠালচোরা, বনতিয়শ্রী, ছালাকান্দা গ্রামের পেছনে নদী, বয়রাহালা, গণেশের হাওর, বর্ণিনদীসহ বিভিন্ন মুক্ত জলাশয়ে গাছের ডাল-বাঁশ পুঁতে মুখে বাঁশের বানা মশারী জাল-মাটির বাঁধ দিয়ে পানি শুকিয়ে ও বিষাক্ত ট্যাবলেট দিয়ে মাছ নিধন করে মুক্ত জলাশয় দখল করে রেখেছে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন সুদৃষ্টি না দেওয়ায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে সরকারি সম্পদ।

সোমবার এসব জায়গায় সরেজমিনে গেলে বাস্তা গ্রামের পিছনে হেরণ বিল ফতেপুর ছত্রকোনার গ্রামের পেছনে ধলাই নদীতে বাশেঁর ভায়না ফেলে বাঁধ দিয়ে জাল ও কর দিয়ে মাছ নিধনের এ দৃশ্য চোখে পড়ে। যেখানে কয়েক বছর আগেও এ ধলাই নদীর পার্শ্ববর্তী জমিগুলোতে পাওয়ার পাম্পে সেচসহ এ নদীতে মাছ ধরে শতাধিক দরিদ্র পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে নদীতে বাঁধ দেওয়ায় সবকিছু থেকে বঞ্চিত জেলে ও কৃষকগণ। নৌপথের মোহনায় বাঁধ দিয়ে মাছ নিধন করায় রবি মৌসুমের শুরুতেই শত শত কৃষক নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে হাওরে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। এ নদী পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে শত শত কৃষক হাওরে উৎপাদিত ধান ঘরে তুলতে নানা দু–র্ভোগের সম্মুখীন হবেন বলে সচেতন মহল আশঙ্কা করছেন। মগড়া ও শাখা ধলাই নদীতে গাছের ডাল, বাঁশ পুঁতে কাটা দেয়ায় এ পথের যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার লক্ষে নদীপথের যাতায়াত সুগম করার জন্য দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন বলে তারা আশা করছেন। এলাকার জেলেরা জানান, আমরা আগে এসব নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন মুক্ত জলাশয়গুলো মসজিদ মাদ্রাসার নাম করে এলাকার প্রভাবশালী লোকজন পত্তন নেয়ায় আমরা মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজে জড়িয়ে পড়ছে। । আমরা মুক্ত জলাশয়গুলোতে অবাধে মাছ ধরার সুযোগ চাই।

মোয়াটি গ্রামের শহীদ মিয়া হেরন বিলে মাছ ধরার সত্যতা স্বীকার করে বলেন ১০লাখ ৬হাজার টাকা বাস্তা ও মোয়াটি গ্রামের মসজিদ কমিটি থেকে ১বছরের জন্য পত্তন নিয়েছি।

ফতেপুর ছত্রকোনা গ্রামের এমদাদ কাজী, মানুমিয়া ও জামাল মিয়া, ধলাই নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ৭ লাখ টাকা দিয়ে ছত্রকোনার গ্রামের অংশ মসজিদ কমিটি থেকে ১ বছরের জন্য পত্তন নিয়েছি।

নায়েকপুর ইউনিয়ন ভূমি উন্নয়ন সহকারী কর্মকর্তা মোঃ ওয়ারেছ উদ্দিন জানান হেরণ বিলে আকশ্রী মৌজা প্রায় ৪ একরের মতো কাশ জমি আছে এটি কিভাবে লিজ নিয়ে মাছ ধরছে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। তবে এটি যদি সরকারিভাবে লিজ দেওয়া যেতো এখান থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হতো

তিয়শ্রী ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা জানান বাস্তা মৌজা ২দুই একর ৫৬শতক সরকারি খাস জমি রয়েছে এটি সরকারি ভাবে লিজ দিতে পারলে মোটা অংকের রাজস্ব আদায় হবে।

ফতেপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন দলাই নদীর শাখা উন্মুক্ত থাকার কথা এখানে কিছু লোক বাদ দিয়ে মাছ দরছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসেই বলতে পারবে এটি কিভাবে ইজারা দিয়েছে। সরকারিভাবে বন্দোবস্তু দেওয়া হলে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করা যেত এতে সরকারের কিছুটা হলেও রাজস্ব আয় হত।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ কামরুল হাসান জানান, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই। তবে জেলেরা মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করবে। কোন প্রভাবশালী মুক্ত জলাশয় পত্তন দিতে পারবে না। মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দিলে ভূমি অফিস ব্যবস্থা নেবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিনা শাহরীন জানান, মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দিয়ে মাছ নিধন করার কোন সুযোগ নেই। যারা অবৈধ ভাবে মুক্ত জলাশয় দখল করছেন তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।