পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চলাচলের রাস্তা বন্ধ, অবরুদ্ধ ৯পরিবার

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সরকারি জমিতে (বরেন্দ্রের নালার ধারের উপর দিয়ে) নির্মিত ৯পরিবারের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার লিখিত অভিযোগ উঠেছে।

এতে চরম বিপাকে পড়েছে ওই পরিবারগুলো। উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের আইড়াখুড়ি গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার প্রায় দেড় মাস পর শেষ পর্যন্ত উপায় অন্ত না পেয়ে ৯পরিবারসহ ১৯জন ভুক্তভোগী নিবেদক হয়ে ৬জনকে বিবাদী করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে গত ২৬ জানুয়ারি একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।

বিবাদীরা হলেন, ওই গ্রামের মৃত খাটু মোহাম্মদ ছেলে মোঃ সহর আলী, মোঃ শহর আলী ছেলে মোঃ তরিকুল ইসলাম ও মোঃ তহিদুল ইসলাম, মৃত এজার উদ্দিন ছেলে মোঃ এনামুল হক, আকবর আলী ছেলে মোঃ লিটন এবং পিন্টু।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে বিবাদীদেরকে ৭দিনের ভিতর রাস্তার অবৈধ দখল ছাড়ার জন্য নোটিশ দেয়া হলে তাঁরা আরও উগ্র মেজাজী হয়ে উঠে। এদিকে রাস্তার সাইটে আবাদী জমির আইল দিয়ে চলাচল করলে সেটাও পুরোপুরি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন অভিযুক্তরা। বর্তমানে ভুক্তভোগীগণ তাদের চলাচলের যানবাহন (সাইকেল, অটোভ্যান) অন্যের বাড়িতে রেখে আবার অন্যের আবাদী জমির সরু আইল দিয়ে চলাফেরা করছেন।

‘প্রায় ১০/১২ বছর আগে পৈতৃক এবং কিছু জমি কিনে বাড়ি করছি। তখন রাস্তা দেখে জমি কিনি। কিন্তু এখন চলাচলের রাস্তাটি একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অটোভ্যান অন্যের বাড়িতে রেখে বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনে তা মাথায় করে অনেক ঘুরে বাড়িতে ঢুকতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের আইড়াখুড়ি গ্রামের বাসিন্দা মৃত আলী হোসেনের ছেলে আনারুল আক্ষেপ করে এসব কথা বলেন।

সরকারি ঘরপ্রাপ্ত বিধবা বিলকিস বলেন, আমি বাইরে কাজ করে বাড়িতে আসাতে হয় অন্যের আবাদী জমির সরু আইল দিয়ে। এটা অনেক কষ্টকর। এ যুগেও এ ধরনের আচরণ করে মানুষ, তা ভাবা যায় না। জাহেলিয়াতের যুগের মতো আচরণ করছে তারা। আমরা যে কী মানবেতর জীবনযাপন করছি, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

কাদের নামে অপর এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, আমাদের কথা বলার জায়গা নেই। ভ্যান চালিয়ে খাই। অনেক হাত-পা ধরেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ওরা দাবি করছে রাস্তার জায়গা ওদের। রাস্তার ওপর বেড়া লাগিয়ে রাস্তা আটকে রেখেছে। মানুষ মরলে লাশ নিয়ে যাওয়ার মতো জায়গা নেই। রাস্তার জমি সরকারি তা তারা মানতে রাজি না।’

ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী আকালু বলেন, ‘প্রায় ২৫ বছরের পুরানো রাস্তা এটি। এই রাস্তা দিয়ে আমরা ঈদগাহ ময়দানে যায়। যখন এখানে অবদার কাজ হয় তখন আমি এই অবদাতে কাজ করেছি। অভিযুক্তরা এই অবদার খেসারত খেয়েছে। তিনি আরও বলেন- মৃত খাটু মোহাম্মদের ছেলে শহর আলী, শহর আলীর ছেলে তরিকুল ইসলাম ও তহিদুল এখন রাস্তাটি নিজেদের বলে দাবি করে রাস্তা আটকে দিয়েছেন। এ কারণে আমরা আশপাশের আবাদী জমির সরু আইল দিয়ে যাতায়াত করছি। বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় ৯-১২টি পরিবারের সদস্যরা বেকায়দায় পড়েছেন।’

অবরুদ্ধ এসব পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘এখানের প্রায় সবাই খেটে খাওয়া দিনমজুর। সবাই শান্তিপ্রিয় গরিব মানুষ। যারা রাস্তাটি বন্ধ করেছেন, তাঁরা স্থানীয় প্রভাবশালীর বুদ্ধিমত্তায় লাফিয়ে উঠেছেন। প্রায় সময় তাঁরা আামাদের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে আসছেন। এবারে তাঁরা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে আনারুলের ক্রয়কৃত শহর আলীর জবর দখলে থাকা জমি বের করে নেয়ায়, হঠাৎ করে তাঁরা তাদের জমি দাবি করে রাস্তাটি দখল করে নেন। এ কারণে চলাচল করতে পারছি না আমরা।’ এ বিষয়ে চেয়ারম্যানকে অভিযোগ দিয়ে কোন ফলাফল পাইনি।

অভিযুক্ত তরিকুল ইসলাম বলেন, আনারুল নামে ব্যক্তি এই রাস্তা দিয়ে ১০ বছর ধরে চলাচল করছে। সে আমাদের কাছ থেকে জমি বের করে নিয়েছে তাই আমরা রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। কেউ কারো রাস্তা বন্ধ করে দেয়া কেমন দেখায় জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, রাস্তার জমি আমাদের ক্রয়কৃত এবং আমাদের নামে পর্চা হয়েছে। তাই আমরা রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছি।
উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সর্দারপাড়া মৌজার জে এল নং- ২৪ এর এস.এ ৩৫৪ নং খতিয়ানের এস.এ ৫১৫১, ৫১৬২ ও ৫১৬৩ নং দাগসহ আরও অন্যান্য দাগ মিলিয়ে বাংলাদেশ সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক এর বিএস রেকর্ডীয় হাল ৬৩৯৮ নং দাগের নালা শ্রেণিভুক্তে ৭৮শতাংশ জমি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল গণি বলেন, তিনি নোটিশ পেয়ে সরেজমিনে গিয়েছেন। রাস্তা এখনো খুলে দেওয়া হয়নি মর্মে প্রতিবেদনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনারকে জানাবেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, অভিযোগ পেয়ে নোটিশ জারী করা হয়েছে। বন্ধকৃত চলাচলের রাস্তার দখল ছেড়ে না দেয়া হলে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রতিবেদন পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।