পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শত্রুতার জেরে রান্না ঘরে আগুন

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শত্রুতার জেরে আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যক্তির রান্না ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের মানিক ডোবা গ্রামে অগ্নিকান্ডের এই ঘটনাটি ঘটে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল করলে তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী ওই পরিবারের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

এঘটনায় আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে ১৭জনের বিরুদ্ধে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের মানিকডোবা গ্রামের মৃত বাচ্চাম উদ্দিনের ছেলে আজিরুলগংদের সহিত আলমগীর হোসেনদের প্রায় দীর্ঘদিন ধরে জমাজমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। জানা যায়, ওই ইউনিয়নের শেখগছ মৌজার জে.এল.নং ৩২ এর এস.এ ২৩৭নং খতিয়ানের এস.এ ৩২২৪ নং দাগে ২৮ শতক জমির মধ্যে ৭শতক জমি আজিরুলগংরা চলতি বছরের গত মার্চ মাসের ২৮ তারিখ জবর দখলের চেষ্টা করেন।

পরে আলমগীরের চাচাত ভাই আনোয়ারুল হক তেঁতুলিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেন। তেঁতুলিয়া মডেল থানা অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে সাধারন ডাইরীতে অন্তর্ভুক্ত করে ফৌ.কা.বি আইনের ১০৭/১১৭(সি) ধারায় এপ্রিল মাসের ২ তারিখ নন এফআইআর প্রসিকিউশন ১৩ এর মাধ্যমে কোর্টে অভিযোগটি দাখিল করেন। এরপর অভিযোগটি এন.জি.আর ১০৬/২২ নং মামলায় রুপ নেয়। পরে আজিরুলগংরা এই দাগের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেন নাই এবং মুচলেকা দিয়ে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে ও এজাহারে আরোও জানা যায়, আজিরুলগংদের বসত বাড়ির টিউবওয়েলের ড্রেনের পানি আলমগীরের জমিতে প্রবাহমান করা হয়। পরে আলমগীরের ওই পানির ড্রেনের জন্য মেহগনির গাছ নষ্ট যাতে না হয়, ড্রেনের পানি বন্ধ করার সময় আজিরুল গং ও তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আজিরুরগংরা আলমগীরের উপর হামলা চালিয়ে গাছ ও টাকা চুরি এবং তার বোনকে শ্লীলতাহানী করেন। পরে তারা অসুস্থ্য হয়ে পড়লে সেই সুযোগে রান্না ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ আজিরুলগংরা।

ভুক্তভোগী আলমগীর ও আনোয়ারুল বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন দলেবলে শক্তিশালী। প্রতিপক্ষরা ইতোপূর্বে ওই জমির উপর মামলা চললে তাঁরা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেন নাই। জমি নিয়ে আজিরুলদের সাথে বিরোধ রয়েছে। সেই শত্রæতার জের ধরে রান্না ঘরে আগুন লাগিয়েছেন। ভুক্তভোগী আলমগীর ও আনোয়ারুল আরোও বলেন, প্রতিপক্ষ আজিরুলরা তাদের অপরাধ মুচনের জন্য এবং মিথ্যা মামলায় ফাসানোর জন্যই নিজেকে নিজেরাই ব্লেট দ্বারা শরীরে কাটা দাগ ও আঘাতের চিহ্ন বানিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যে কোনো সময় প্রতিপক্ষ আজিরুলরা তাদের বড় ধরণের ক্ষতি সাধন করবেন বলে জানিয়েছেন।

প্রতিপক্ষের আজিরুল বলেন, তাঁরা নিজেরাই রান্না ঘরে আগুন লাগিয়ে তাদেরকে ফাসানোর চেষ্টা করছেন। আজিরুল আরোও বলেন, তিনি রোগীকে নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তাঁর এমন কথায় রোগীর কথা জিজ্ঞাস করলে বলেন, সাহিনা বেগম ও ফরিদা বেগম দু’জন রোগী রয়েছে, তাদেরকে এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।

অপর এক প্রতিপক্ষ সামিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দু’জনই রোগী রয়েছেন। একজন ছোট বাচ্চা ও আরেকজন মহিলা। এছাড়া আর কোন রোগী রয়েছেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, না আর কোন রোগী নেই।
উক্ত বিষয়ে ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, তিনি ঘটনার দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং উভয়পক্ষকে আইন শৃক্সখলা বজায় রাখতে বলেন।

এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তপন কুমার রায় বলেন, তিনি ৯৯৯ এর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে যান এবং আইন শৃক্সখলা বজায় রাখতে বলেন। তিনি বলেন, উভয় পক্ষকে যার যে সমস্যা থানায় অভিযোগ দেয়ার কথা বলেছেন। রান্না ঘরে আগুন এই ঘটনাটি শত্রæতার জেরে কিংবা নিজেরাই লাগিয়েছেন কিনা এ ধরণের কোন তথ্য পাওয়া গেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এ ধরণের কোন তথ্য তিনি পাননি।

অন্যদিকে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, এ ধরণের কোন অভিযোগ তিনি পাননি। ঘটনা ঘটার সাথে সাথে অফিসার ঘটনাস্থলে যান। সেখানে মামলা মোকদ্দমা চলছেন। হইতো নিজেরাই আগুন লাগাতে পারেন। এ ধরণের তথ্য অফিসার জানিয়েছেন বা জানতে পারা যাচ্ছে।