পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কণ্যা সন্তানের জন্ম দেয়ায় চতুর্থ স্ত্রীকে তালাক দিলেন স্বামী

২০১৪ সালে পারিবারিকভাবে ধুমধাম করে মেয়ে নিশাতের (ছদ্দনাম) বিয়ে দিয়েছিলেন ধানখালী ইউপির চর নিশানবাড়িয়া গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম। কথা ছিল নিশাতকে সুখে শান্তিতে রাখবে মেয়ে জামাতা আমিরুল ইসলাম ও তার পরিবার।

আমিরুল কলাপাড়া পৌর শহরের ৬ নং ওয়ার্ডের উপজেলা সড়ক সংলগ্ন এলাকার মৃত সালাম মাষ্টারের কনিষ্ঠ পুত্র। কিন্তু বিয়ের ২ মাস না যেতেই মেয়ের উপর শুরু হয় স্বামী বাড়ির নির্যাতন। শাশুড়ি,ভাসুর এবং স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে বাধ্য হয়ে সংসার জীবনের স্বপ্ন ভেঙ্গে বাবার বাড়িতে ফিরতে হয় নিশাতকে। এর কিছুদিন না যেতেই ফের আমিরুলকে বিয়ের পিরিতে বসাতে মরিয়া হয়ে ওঠে তার পরিবার। এবার প্রথম বিয়ে গোপন রেখে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য কনে ঠিক করা হয় ধুলাসার ইউপির চাপলী এলাকার শাহজাহান মুন্সির কণ্যা মেহেজাবিনকে (ছদ্দনাম)। মুসলিম শরিয়ানুযায়ী পারিবারিকভাবে বিয়েকার্য শেষ হলে কিশোরী এ নববধূকে গৃহে তুলে আনেন আমিরুল। সপ্তাহ না যেতেই ফের দ্বিতীয় স্ত্রীকেও নির্যাতন শুরু করে ওই পরিবারের সদস্যরা। ঠিকমত ভরন পোষন না দেয়াসহ শীতবস্ত্র পরিধানেও ছিল স্বামী বাড়ির অনিহা।

এমনকি স্বামী,স্ত্রীকে কক্ষের দরজা খুলে ঘুমানোর নির্দেশ দিতেন শাশুড়ি মা। আর মায়ের বাধ্য ছেলে তা অমান্য করতেন না কখনোই। এভাবেই মুখ বুঝে সহ্য করে এক বছর কাটালেও শেষে ধকল কাটিয়ে উঠতে না পেরে বাধ্য হয়ে সংসার ছাড়ের মেহেজাবিনও। এর পরে আবারও রোমন্টিক বয় আমিরুলের জন্য বধূ খুঁজতে শুরু করে পরিবার। আবারও দ্বিতীয় বিয়ে গোপন রেখে শুরু হয় তৃতীয় পরিকল্পনা। এবার তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে লালুয়া ইউপির ধনজুপাড়া গ্রামের মস্তফা তালুকাদারের কণ্যা স্কুল শিক্ষার্থী সামিরাকে (ছদ্দনাম) ঘরে তুলে নেন আমিরুল ও তার পরিবার।

ঠিক এখানেও বিয়ের ২০ দিন না যেতেই শুরু হয় পাশবিক নির্যাতন। হতভাগা সামিরাও নির্যাতন সইতে না পেরে বাধ্য হয়ে ফিরে যান বাবার বাড়িতে। তবে বিয়ের ধারাবাহিকতা বন্ধ করেনি আমিরুলের পরিবার। সবশেষে টার্গেট করে দশম শেনীতে পড়ুয়া রিবা আক্তারকে। চতুর্থ বারের মত এই কিশোরির পরিবারকে মিষ্টি কথার জালে ফাঁসিয়ে তিন বিয়ের কথা গোপন রেখে তাকে বিয়ে করেন আমিরুল। রিবা আক্তার উপজেলার বালিয়াতলী ইউপির বাবলাতলা গ্রামের রেজাউল মিয়ার মেয়ে।

কিন্তু রিবা আক্তারকেও ঘরে তুলে ফের শুরু হয় নির্যাতন। দরিদ্র ঘরের মেধাবী কণ্যা রিবা মুখ বুজে সইছিলেন নির্যাতন। এরই মাঝে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি। আর এতেই বেড়ে যায় নির্যাতনের মাত্রা। সর্বশেষ শর্ত জুড়ে দেয়া হয় রিবা আক্তারকে। পুত্র সন্তান না হলে ঘর ছাড়াতে হবে তাকে। অপরদিকে ভাগ্য সহায় না থাকায় কণ্যা সন্তানের জন্ম দেয় রিবা। এর পরেই বদলে যায় দৃশ্যপট। ভরন পোষন বন্ধ রেখে শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। চুতর্থ স্ত্রী রিবার অভিযোগ, স্বামী বাড়ির লোকজন কোন ভাবেই মানতে পারছিলেন না কণ্যা সন্তানকে। এর জের ধরে গত বছরের ২ ডিসেম্বর রিবাকে অমানুষিক নির্যাতন করে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে স্বামী ও তার পরিবার।

পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে ভর্তি করে। দীঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে ভুয়া ডিভোর্স লেটার পাঠায় আমিরুল। পরে বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ করেন রিবার বাবা। রিবার বাবার অভিযোগ, যৌতুক চাওয়াসহ কন্যা সন্তাান জন্ম দেয়ায় তার মেয়ের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে আমিরুল ও তার স্বজনেরা। সর্বশেষ মিথ্যা তালাক নামা পাঠিয়েছে। কিন্তু আমার মেয়ে সংসার ছাড়তে নারাজ। শত নির্যাতন সহ্য করলেও তাকে বিদায় করার পায়তারা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, জামাতার বড় ভাইও একাধিক বিয়ে করেছেন। পরিবারে সবাই আমার মেয়ে নির্যাতনে জড়িত। আমি তাদের বিচার প্রার্থনাসহ মেয়ের সংসার ফেরত চাই। এবিষয়ে আমিরুলের মা কানন বেগম জানান, আমার ছেলেটা মানুসিক অসুস্থ, আর আমি কোন পুত্র বধূকে নির্যাতন করিনি। কলাপাড়া থানার ওসি মো. জসিম জানান, এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা আমলে নিয়ে তদন্ত করছি। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।