পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি বন্ধ! আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

পাবনা মানসিক হাসপাতালের টেন্ডার কার্যক্রমের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে রোগীদের খাবার সরবরাহ। এ কারণে ভর্তিকৃত রোগীদের পর্যায়ক্রমে বাড়িতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একইসাথে বহির্বিভাগে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রতন কুমার রায় স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। পাবনা মানসিক হাসপাতালের ওয়েব সাইটে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রতন কুমার রায় স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, ‘একজন ঠিকাদারের মামলার কারণে পাবনা মানসিক হাসপাতালে টেন্ডার কার্যক্রমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন আদালত। এ কারণে টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব না হওয়ায় রোগীদের খাবার সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের খাবার সরবরাহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র মারফত ও সরাসরি অবহিত করা হয়েছে। এজন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রোগীদের খাবার সরবরাহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ বা নির্দেশ প্রদান না করায় রোগীদের খাবার সরবরাহ চলমান রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের পর্যায়ক্রমে বাড়িতে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কনসালটেন্ট ও ওয়ার্ড ডাক্তারদের নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এসএম আবু সিনা ও শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘হাসপাতালের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত শনিবার থেকেই রোগী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। রোববার স্যার আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। রোগীদের কিভাবে বাড়িতে ফেরত পাঠানো যায় সেই ব্যবস্থা চলছে।’

তারা জানান, ‘হাসপাতালের পেইড বেডে রোগী ভর্তি চলছে। কারণে পেইন বেডে রোগীর থাকা-খাওয়ার খরচ রোগীর স্বজনরা বহন করে। প্রতিমাসে পেইড বেডের রোগীদের জন্য ৮ হাজার ৫৫২ টাকা করে নেয়া হয়। কিন্তু ফ্রি’র রোগীর কোনও টাকা নেয়া হয় না। তাদের খরচ সরকারি তহবিল থেকে সংগ্রহ করা হয়।’

হাসপাতালের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে, ৫০০ শষ্যার এই হাসপাতালে এখন আনুমানিক ৪৮০ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে ১৫০ জনের মতো পেইড বেডে ভর্তি। বাকি রোগীগুলো ফ্রি বেডের।

এ বিষয়ে হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. শফিউল আযম বলেন, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ঠিকাদার নিযুক্ত না থাকায় গত দুই মাস ধরে বাকিতে রোগীদের খাবার কেনা হচ্ছে। প্রতিমাসে রোগীদের খাবারে ব্যয় হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে বিলগুলো দেয়া হবে এ সিদ্ধান্তটা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ভারপ্রাপ্ত পরিচালক স্যার বাধ্য হয়ে এ নির্দেশ জারী করেছেন।’

হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: রতন কুমার রায় বলেন, ‘আমরা অনেকবার বিষয়টি সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি, কিন্তু লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা রোগী ভর্তি বন্ধ রেখেছি। আমরা চাই দ্রুত বিষয়টি সমাধান হোক।’

উল্লেখ্য, গত ২০২১ সালের ১৪ জুন রোজ এন্টারপ্রাইজ নামে পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে দ্রব্যের নাম উল্লেখ করা জটিলতা নিয়ে পাবনা জজ কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। আদালত ওই বছরের ২৯ জুন সার্বিক বিবেচনায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিবাদীর (মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) বিরুদ্ধে অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারী করলে দেখা দেয় এই জটিলতা।