পিরোজপুর জেলার শ্রেষ্ঠ সভাপতির বিদ্যালয়ে রয়েছে নানা অসঙ্গতি ও অনিয়ম

অনেক অসঙ্গতি থাকার পরেও পিরোজপুর জেলার শ্রেষ্ঠ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মঠবাড়িয়া উপজেলার ২০১ নং দেলোয়ারা মালেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মালেক। জাতীয় শিক্ষক পদক- ২০২২ এ জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরপর ২০২০ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন সহকারি শিক্ষক সুশীল কুমার মিত্র। এরপর ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে আছেন সহকারি শিক্ষিকা মনিকা রানী মিত্র। একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আর দুই জন সহকারি শিক্ষক দিয়েই চলছে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম। প্রাক-প্রাথমিক সহ ৬টি ক্লাসের জন্য ২ জন সহকারি শিক্ষক, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা।

প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শ্রেনী কক্ষের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে তা দেখা যায়নি। খরচ করা হয়নি প্রাকের বরাদ্দ। ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে দেখা যায় নি ম্যানেজিং কমিটির কাউকেই। অনুষ্ঠান পালনের কথা বললেও অনুষ্ঠানের স্টিল ছবি বা ভিডিও দেখাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক।

প্রধান শিক্ষক মনিকা রানী মিত্র জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খুবই ভাল মানুষ। এজন্য আমি চেকে স্বাক্ষর করে দেই। তিনি টাকা উত্তোলন করে স্কুলে ব্যয় করেন। ২০২১-২২ অর্থ বছরের স্লিপের ৫০ হাজার টাকা সভাপতি উত্তোলন করেছে। কাজ করবে।আর ২ লক্ষ টাকার ক্ষুদ্র মেরামতের টাকাও আমি স্বাক্ষর করে দিয়েছে তিনি উত্তোলন করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বিদ্যালয়টির নতুন ভবনের কাজ চলমান। ২০-২১ অর্থ বছরে নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়।খেলার মাঠের বিপরীত পাশে সরকারি টাকায় তৈরি করা হয় একটি আপদকালীন অস্হায়ী গৃহ। ২১-২২ অর্থ বছরে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে এখানে। নতুন ভবনের কাজ চলমান থাকলেও ক্ষুদ্র মেরামতের ২ লক্ষ টাকা অস্থায়ী গৃহে ব্যয় করার নামে কাগজে কলমে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়েছে সভাপতি।

২০-২১ অর্থ বছরে তৈরি অস্থায়ী গৃহটি ২১-২২ অর্থ বছরে মেরামতের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকার ইট ক্রয়ের ভাউচার করা হলেও তা জানেন না ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা দিয়ে কি করা হয়েছে তা জানতে চাইলে সঠিকভাবে বলতে পারেননি তারা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে,ভাউচারগুলো একই হাতের লেখা।দোকান থেকে ফাঁকা ভাউচার সংগ্রহ করে সিস্টেম অনুযায়ী মিলিয়ে লেখা হয়েছে এ ভাউচার। উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে এ ভুয়া বিল ভাউচার।

ক্ষুদ্র মেরামত সংক্রান্ত পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে,কোন বিদ্যালয়ে এলজিইডি কর্তৃক মেজর মেরামতের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া চলমান থাকলে অর্থাৎ নতুন ভবনের কাজ শুরু হলে ওই বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। এক্ষেত্রে বরাদ্দপ্রাপ্ত অর্থ সমর্পণ করতে হবে অর্থাৎ ফেরত দিতে হবে।

এ ব্যাপারে সহাকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার হেমায়েত গাজী জানান,নতুন ভবনের কাজ চলাকালীন ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দ কেন দেওয়া হয়েছে তা আমি জানি না। তবে সভাপতিই বিদ্যালয়টিতে বেশি খোঁজ খবর রাখেন।

বিদ্যালয়ের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মালেককে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।

মঠবাড়িয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন জানান,নতুন ভবনের কাজ চলাকালীন এ বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা অফিস থেকে ক্ষুদ্র মেরামতের ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বিশেষ সুপারিশের ভিত্তিতে বরাদ্দটি দেওয়া হয়েছে।

শেখ রাসেল দিবসের অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির কাউকেই উপস্থিত হতে দেখা যায় নি। এমন বিদ্যালয়ের সভাপতি জাতীয় শিক্ষক পদক-২০২২ এ কিভাবে জেলার শ্রেষ্ঠ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি উপজেলা শিক্ষা অফিসার রুহল আমিন।

তবে এ শিক্ষা অফিসারের কথা থেকে বুঝা যায়, ইতোপূর্বে খরচ করা অনুদান পুষিয়ে নিতেই এ বরাদ্দ তদবির করে পাস করিয়েছেন সভাপতি আব্দুল মালেক।