বিএনপি চলতি মাসে ১৬টি সমাবেশ করার ঘোষণা দিলো

জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে চলতি মাসে রাজধানীতে টানা ১৬টি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা হুশিয়ারি দিয়েছেন, সমাবেশে বাধা আসলে রাজপথে জোর লড়াই হবে।

শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। চলবে ২৭শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই সমাবেশের আয়োজন করে রমনা ও পল্টন থানা বিএনপি।

সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলন আমাদের থেমে নেই। গত মাস থেকে যে আন্দোলন শুরু করেছি সেই আন্দোলন চলছে।

তিনি বলেন, আমাদের এই আন্দোলন চলতেই থাকবে। ঢাকা মহানগরীর ১৬টি স্পটে বা জোনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ আমরা করব। যা আজকের সমাবেশের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোড শেডিং ও পুলিশের গুলিতে দলীয় কর্মী নিহতের প্রতিবাদে এই সমাবেশে সিনিয়র নেতারাও বক্তব্য রাখেন।

তারা বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম এক লাফে এতোটা বাড়ানো হয়নি। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লোপাটের কারণেই সব পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

সমাবেশ থেকে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪ দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। পাশাপাশি উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফর প্রসঙ্গ।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রী এবার ভারতে গেছেন, আমাদের তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তির সমাধান হবে, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা আমরা পাব, সীমান্তে হত্যা বন্ধ হবে।

আমাদের যে বাণিজ্যে ব্যবধান আছে, সেই ব্যবধানগুলো কমে আসবে। আমাদের আরও সুযোগ-সুবিধা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নিয়ে আসতে পারবেন।

তিনিও যে আশা নিয়ে গিয়েছিলেন, ভারত সেগুলো দিয়ে দেবে। আমার দেশের মানুষ যখন মারা যাচ্ছে, যখন গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, যখন মাকে তার সন্তান থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তখন তারা জয়পুর বিমানবন্দরে গিয়ে নাচানাচি করছেন। এই দেশের মানুষ এটা ক্ষমা করবে না।

তিনি আরও বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, অবশ্যই ভারতের সঙ্গেও বন্ধুত্ব চাই। ভারত আমাদের বন্ধু প্রতিম দেশ।

আমরা আশা করি- যে ভারত এদেশের জনগণকে ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল, সেই ভারত অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের যে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, যে লড়াই তাতেও তারা সহযোগিতা করবে। কারণ, গণতান্ত্রিক দেশগুলো থেকে আমরা এটাই আশা করি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের ভালোবাসা না নিয়ে, বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন না নিয়ে এখানে কেউ কখনো কিছু করতে পারবে না। তাই আমরা আজকে যে সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে তাদেরকে সরাতে হলে আমাদের ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, সেই ঐক্যে সব জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সরকারকে সরিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপরে পুলিশের গুলি করার ঘটনাকে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করে সরকারের এহেন কর্মকাণ্ড এবং দেশের আর্থিক খাতে ক্ষমতাসীনদের খাস লোকদের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের ঘটনার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন উর রশীদ।