বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণের শামিল : তথ্যমন্ত্রী

বিএনপি মহাসচিবের গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে দেশে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এ বক্তব্যকে গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণের শামিল বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহ্‌মুদ।

রবিবার (২৩ এপ্রিল) বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দেওয়ানজী পুকুর লেনের বাসভবনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে সাংবাদিকরা ঈদের দিন শনিবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেবের বক্তব্য মিডিয়ার ওপর আক্রমণ। আমি মনে করি এই আক্রমণ সমীচীন নয়। ফখরুল সাহেব প্রচন্ড হতাশা থেকে এই কথাগুলো বলেছেন। আজকে বাংলাদেশে যেভাবে স্বস্তির ঈদযাত্রা হয়েছে, মানুষ যেভাবে স্বস্তিতে ঈদ উদযাপন করেছে, বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যে এটি সত্যিই উদাহরণ। একটু যা অস্বস্তি ছিল গরমের কারণে, তাতে বিএনপি নেতাদের মাথা খারাপ হয়েছে কি না আমি জানি না।

সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের গাণিতিক বৃদ্ধি ঘটেছে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় বাংলাদেশে সাড়ে চার’শ দৈনিক পত্রিকা ছিল, এখন ১২শ’ ৬০ টির বেশি। ১৯৯৬ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের যাত্রাটাও শেখ হাসিনার হাত ধরেই হয়েছে। ২০০৯ সালে টেলিভিশন চ্যানেল ছিল ১০টি, এখন ৪৭টির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে, তন্মধ্যে ৩৬টি সম্প্রচারে আছে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাকিগুলো খুব সহসা সম্প্রচারে আসবে। এতগুলো টেলিভিশন চ্যানেল হওয়াতে সাংবাদিকতা থেকে পাশ করা আমাদের ছেলেমেয়েদের চাকুরির একটা বড় ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

একইসাথে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই মিডিয়ার ব্যাপ্তি ঘটলেও আমরা দেখতে পাই গণমাধ্যমে আজকে দেশের যে উন্নয়ন অগ্রগতি সেটি ঠিকভাবে পরিস্ফুটিত হয় না। খারাপ সংবাদ অনেক ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়। কেউ কেউ মনে করেন ‘গুড নিউজ ইজ নো নিউজ, ব্যাড নিউজ ইজ নিউজ’ এটি সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি।

হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, প্রকৃতপক্ষে আজকে সারা পৃথিবী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করছে। করোনা মহামারি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রেও নিক্কি ইনস্টিটিউট এবং ব্লুমবার্গের যৌথ জরিপ বলছে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীতে পঞ্চম এবং উপমহাদেশে প্রথম। করোনা মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়েছে। সেটি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানে প্রশংসা হয়েছে। এ নিয়ে দু’দেশের গণমাধ্যমে তাদের রাজনীতিবিদ ও ক্ষমতাসীনদের নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রশংসার ফুলঝুরি বয়ে যাইনি, এটিই বাস্তবতা।
তথ্যমন্ত্রী হিসেবে এবং এর পূর্বে দীর্ঘ সাত বছর দলের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সাথেই আমার সংসার, এমন মন্তব্য করে ড. হাছান বলেন, ‘সারাবিশ্বে বিএনপির ‘পেইড এজেন্ট’ আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তারা সারা পৃথিবী থেকে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা যে বিভিন্নজনের কাছে এ কাজের জন্য টাকা পাঠান সেই অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে, কাকে কত টাকা দেওয়ার কথা ছিল, টাকা না দেওয়াতে তারা গোস্বা করেছে। এগুলোতেও যখন কাজ হচ্ছে না, তাই মিডিয়ার ওপর চড়াও হয়েছে বিএনপি। অথচ মিডিয়া চাইলেও সরকারের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষেত্রে খারাপ সংবাদ পাচ্ছে না বলেই পরিবেশিত হচ্ছে না।

বিএনপির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি দেখতে পাচ্ছে বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়ে, হাত-পা মালিশ করে কোনো লাভ হয়নি। বিএনপি যাদের ওপর ভরসা করেছিল তারাও দেখতে পাচ্ছে বিএনপির ওপর কোন ভরসা নাই।

মন্ত্রী বলেন, এই পরিস্থিতিতে বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে কোলাব্যাঙের মত আওয়াজ তুলছে মাত্র। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেবদের বড় একটা গলা আছে, অন্য কোন কিছু নেই। ব্যাঙ প্রাণি ছোট, কিন্তু আওয়াজটা খুব বড়। যখন বর্ষাকালে চারদিক ডুবে যায় তখন ব্যাঙ প্রচন্ড আওয়াজ করে। আসলে বিএনপির অবস্থাও তেমনই হয়েছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম চিশতি, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সহসভাপতি সফর আলী ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।