ভোট আনন্দে মাতোয়ারা সাতক্ষীরার ১৩ ইউনিয়নের মানুষ

আসন্ন ইউপি নির্বাচন ঘিরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অলিগলি ছেয়ে গেছে নির্বাচনী পোস্টারে। আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরুর দিন থেকেই প্রার্থীদের পোস্টার শোভা পাচ্ছে পাড়ায়-পাড়ায়, মোড়ে-মোড়ে। যদিও আগে থেকেই উপজেলাজুড়ে ছিল প্রার্থীদের শুভেচ্ছা সংবলিত ব্যানার-পোস্টার। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলেন প্রার্থীরা।

চেয়ারম্যান প্রার্থীর পাশাপাশি রাজপথ থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় শোভা পাচ্ছে মেম্বর প্রার্থীদের পোস্টারও। নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় দলটির সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। একইভাবে জামায়াত সমর্থক নেতারাও ভোল পাল্টে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাই আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন জোরে-শোরে। রাস্তার পাশে, দেওয়ালে, অলিগলিতে কোথাও এতটুকু ফাঁকা নেই। সবখানেই দেখা যাচ্ছে চেয়ারম্যান, নারী সদস্য ও সাধারণ সদস্যদের ছবি সংবলিত পোস্টার। এসব পোস্টার ও ব্যানারে প্রার্থীদের ছবি, ¯েøাগানের পাশাপাশি রয়েছে নির্বাচনী নানা প্রতিশ্রুতি।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বাশদহা, কুশখালি, বৈকারি, ঘোনা, শিবপুর, ভোমরা, ধুলিহর, ব্রহ্মরাজপুর, আগরদাড়ি, ঝাউডাঙ্গা, বল্লী, লাবসা ও ফিংড়ী এলাকা নির্বাচনী পোস্টারে ঢেকে গেছে। এলাকার স্কুল, কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সামনে সারি সারি সাদা-কালো পোস্টার লাগানো হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রধান সড়কে ঢুকতেই এসব পোস্টার চোখে পড়ছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পোস্টার ঝুলতে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মেম্বর পদপ্রার্থীরা নিজেদের পোস্টার এলাকায় লাগাচ্ছেন। তবে চেয়ারম্যান পদে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টারও দেখা যায়।

এদিকে, প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত এলাকায় চলছে উচ্চ শব্দে মাইকিং। পাড়ায়-পাড়ায় প্রার্থীদের মাইকের আওয়াজে কান-মাথা ঝালাপালা হচ্ছে বলে জানান সাধারণ ভোটাররা। ছন্দে-ছন্দে ভরাট গলায় একাধিক প্রার্থীর মাইক থেকে একই সাথে চালানো হচ্ছে প্রচার। অপরদিকে গ্রামের হাট-বাজার ও বিভিন্ন মোড়ের চায়ের দোকানগুলোতে কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বসছে গরীবের সংসদ। সেখানে কষ্টাধোয়া হচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের বিশ্লেষণ আর পাওয়া না পাওয়ার সমীকরণ চলছে গরীবের সংসদে।

এদিকে প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন পরিচয় ও প্রত্যয়। সব মিলিয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে লেগেছে ভোটের হাওয়া। উৎসবমূখর পরিবেশে চলছে প্রচার-প্রচারণা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম আগেই জানিয়েছেন, ২য় ধাপের ইউপি নির্বাচনে সাতক্ষীরায় সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর। ২৬ অক্টোবর নির্ধারিত দিনে সাতক্ষীরায় ইউপি নির্বাচনে ২৫জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।

তিনি আরও জানান, নির্বাচনে ৭৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর দাখিলকৃত বৈধ মনোনয়ের মধ্যে ৮জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এছাড়া, সাধারণ সদস্য (পুরুষ) ৫১৩ জনের মধ্যে ২ জন এবং ১৬২ জন সংরক্ষিত নারী প্রার্থীর মধ্যে ১৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেছেন। এরমধ্যে একজন সাধারণ সদস্য বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

এর আগে ১৭ অক্টোবর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৭৪৮জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৭৩জন, সাধারণ ইউপি সদস্য পদে ৫১৩ জন ও সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য পদে ১৬২জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। দলগতভাবে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ১৩, জাতীয় পার্টি ৩, ইশা আন্দোলন ৩ ও স্বতন্ত্র ৫৪ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা রির্টানিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার শরিফুল ইসলাম আরও জানান, চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে মোট ১৯ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ ১৩, জাতীয় পার্টির ৩ এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের ৩ জন প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া ৫৪জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে কুশখালীতে চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ ১৩ জন প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া এই ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য ৪০ ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৮জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। চেয়ারম্যান পদে সর্বনি¤œ ৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ঝাউডাঙ্গায়। এখানে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ১৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৪৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এছাড়া বৈকারী ইউনিয়নেও চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৮ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বাঁশদহা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ঘোনা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৭ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

শিবপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১২ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ভোমরা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১২ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ধলিহর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৪৪ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৭ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। আগরদাড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৭ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৫৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বল্লী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। লাবসা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৪০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ফিংড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৫ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৮ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।