ময়মনসিংহের গৌরিপুরে পরকীয়ার জেরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

পরকীয়ার জেরে জামাল (৩৬) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে। এই ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার পূর্ব দাপুনিয়া মহল্লায়। খবর পেয়ে শনিবার সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় ও প্রধান অভিযুক্তসহ তিনজনকে আটক করেছে।

জানা গেছে, ট্রাক চালক শরিফ মিয়া(৪২)। দিনভর বাইরে থেকে গভীর রাতে ঘরে ঢুকেই দেখেন স্ত্রীর সাথে বিছানায় যুবককে। তাৎক্ষনিক ক্ষিপ্ত হয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করেন। আর তাতে যোগ দেন ছেলে ও ছেলের বন্ধু। প্রাণে বাঁচতে দৌড়ে গিয়ে শেষ রক্ষা হয়নি ওই যুবকের। আহত অবস্থায় দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।

স্থানীয় সুত্র ও পুলিশ জানায়, গৌরীপুর পৌরসভার কলাবাগান মহল্লার মো.আব্দুল জলিলের ছেলে জামাল মিয়া(৩৬) একজন হ্যান্ড ট্রলি চালক। তাঁর ট্রলিতেই সহকারী হিসাবে কাজ করে প্রতিবেশী ট্রাক চালক মো. শরিফ মিয়ার ছেলে সজিব মিয়া (১৮)। এই সুত্রে তাদের সাথে গভীর সর্ম্পক গড়ে উঠে।
প্রতিবেশীরা জানান, অজ্ঞাত কারনে

মিয়াকে প্রায়ই শরিফের বাড়িতে অবস্থান করতে দেখা যেতো। শরিফ বাড়িতে না থাকলেই জামাল সুযোগ বুঝে ওই বাড়িতে যেতো। এ নিয়ে মহল্লায় নানান ধরনের সমালোচনা চলতো। এ নিয়ে বছরখানেক পূর্বে দেন দরবার হয়। তাকে নিষেধ করে দেয়া হয় শরীফের বাড়িতে যেতে। কিন্তু এতে কান দিতো না শরিফের স্ত্রী সামছুন্নাহার। সমালোচনা দূরে রেখে শরিফের স্ত্রী জামালের সাথে সর্ম্পক ঠিক রাখে।

প্রতিবেশীরা আরও জানায়, জামালের সাথে শরিফের স্ত্রী সামছুন্নাহারের অবৈধ সর্ম্পক রয়েছে এ বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হলে ক্ষেপে যায় শরিফ। এক সময় শরিফ ও জামালের মধ্যে সর্ম্পকের চির ধরে। এ নিয়ে দুই জনের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ থাকে। বিশেষ করে এ সব ঘটনা নিয়ে স্ত্রীর সাথে শরিফের ঝগড়া বিবাধ লেগেই থাকতো।
গতকাল শুক্রবার শরিফ ও তাঁর ছেলে কাজের জন্য বাহিরে যায়। ফাঁকা বাড়ি দেখে জামাল অন্যান্য সময়ের মতো রাতের কোনো এক সময় শরিফের বাড়িতে প্রবেশ করে। এ দিকে শরিফ রাত তিনটার দিকে বাড়িতে গিয়ে বসত ঘরে প্রবেশ করেই দেখতে পান তাঁর ঘরে স্ত্রীর বিছানায় জামাল অবস্থান করছে। এ সময় শরিফ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে আটকিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। পরে অন্য ঘরে থাকা ছেলে ও ছেলের বন্ধু মিলে জামালকে ব্যাপক মারধর করে। এতে আহত অবস্থাতেই জামাল দৌড়ে গিয়ে পাশেই নিজ বাড়িতে আশ্রয় নেয় । সেখানেই সে অচেতন হয়ে পড়লে দ্রæত উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।

অন্যদিকে নিহত জামালের মামি রিনা আক্তার সাংবাদিকদের জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর ভাগিনা জামাল শরিফের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা পেত। এই টাকা দিতে শরিফ গড়িমসি করছিল। এ অবস্থায় আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে গত শুক্রবার শরিফ জামালকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।
এ বিষয়ে গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান জানায়, এ হত্যাকান্ডে জড়িত পূর্ব দাপুনিয়া এলাকার মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে শরীফ হোসেন এবং তার ছেলে সজীব মিয়া ও তার বন্ধু কাজী রাহাত মামুন নামে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পরকীয় সম্পর্কের জেরে এ হত্যাকান্ডটি হতে পারে। ঘটনার পর থেকে শরীফের স্ত্রী পলাতক রয়েছে, তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।