ময়মনসিংহে ডিবি পুলিশের অভিযানে প্রতারক গ্রেফতার

প্রতারক মহিদুল ইসলাম মইদুল,বিয়েই তার পেশা– বিয়েই তার নেশা—রেহাই পায়নি প্রতিবন্ধীও বে-রসিক ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশ ১৩ বিয়ের খল নায়ক প্রতারক মইদুল ও তার সহযোগী ঘটককে পাকড়াও করেছে
ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়ে নৌবাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে বিয়ে পাগল ১৩ টি বিয়ে করার খলনায়ক প্রতারক মইদুলকে গত ৯ ফেব্রুয়ারী পাকড়াও করেছে।পুলিশ জানায় দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌবাহিনী সদস্যের পরিচয় দিয়ে মুহিদুল ইসলাম ওরফে মইদুল নিরিহ সাধারণ পরিবারের মোট ১৩ জন মেয়েকে বিবাহের মাধ্যমে অর্ধ কোটিরও বেশী টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।প্রতারক চক্রের মূলহোতা মইদুল ও এক ঘটকসহ ২ জনকে গ্রেফতার ভূয়া আইডি কার্ড ও ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি উদ্ধার করেছে ।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা ১০ ফেব্রুয়ারী দুপুরে তাঁর অফিসে প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের জানান মুসলিম পরিবার গুলোর কাছে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন ও সামাজিক রীতি হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।
গ্রামের সাধারণ মুসলিম পরিবারের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদেরকে নিজেদের সাজানো ঘটকের মাধ্যমে বিবাহের প্রস্তাব পাঠিয়ে বিবাহ করে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।প্রতারক মইদুল নিজেকে নৌবাহিনীর সদস্য হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ধর্মীয় রীতিতে বিবাহের মাধ্যমে ১৩ টি পরিবারের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এক অপকৌশল রচনা করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এই প্রতারনার বিষয়ে জনৈকা ভিকটিম ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের কাছে ৫জন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ ফারুক হোসেন এর নেতৃত্বে একটি চৌকষদল গাজীপুর জেলার চন্দ্রা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
এই প্রতারক চক্রের মূল হোতা মোঃ মহিদুল ইসলাম ওরফে মইদুল(২৭),পিতা-মোহাম্মদ আলী, ঠিকানা-চরকাটারী (আহেদালী পাড়া),থানা-দৌলতপুর,জেলা-মানিকগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানা এলাকা থেকে কুদ্দুস আলী (৩৫), পিতা-মৃত জালাল উদ্দিন,ঠিকানা-নগুয়া,থানা- তারাকান্দা,জেলা-ময়মনসিংহকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

অভিযোগের ভিত্তিতে তারাকান্দা থানায় মামলা নং-০৬,তারিখ-১০/০২/ ২০২৪ ইং,ধারা-১৪০/৪৯৫/ ৪০৬/ ৪১৯/ ৪২০/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এমএলএসএস হিসেবে ২ বছর চাকুরী করার পর বিধি বহির্ভূতভাবে বাল্য-বিবাহ করার অপরাধে চাকুরীচ্যুত হয়ে আসামী মহিদুল প্রতারণার মাধ্যমে বিবাহকেই তার পেশা হিসেবে বেচে নেয়। মামলার এজাহারে বর্ণিত অন্যান্য আসামীদের সাথে নিয়ে বিবাহের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চক্র তৈরি করে।
এই কাজে বিজিবি থেকে চাকুরীচ্যুত এক সদস্য তাকে সরাসরি সহায়তা করে। গ্রেফতারকৃত অপর আসামী কুদ্দুছসহ অন্যান্যরা কখনও ঘটক কখনও মহিদুলের নিকট আত্মীয় হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে সাধারণ পরিবারের অভিভাবকদের বিশ্বাস অর্জন করত এবং প্রতারণার অপকৌশল বাস্তবায়নে সংঘবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করত।

এপর্যন্ত মহিদুল নিরিহ ১৩জন মহিলাকে তার এই প্রতারণার ভিকটিম বানিয়ে সরলতার সুযোগ নিয়ে বিবাহ করেছে বলে স্বীকার করেছে।যার মধ্যে মানিকগঞ্জের ৩ জন, টাঙ্গাইলের ৩ জন, কিশোরগঞ্জের ১ জন ও ময়মনসিংহের ৬ জন রয়েছে। মহিদুলের এই প্রতারকচক্র এসবপরিবারের কাছ থেকে ৫০ লক্ষেরও অধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এমনকি তার এই প্রতারণার ফাঁদ থেকে প্রতিবন্ধী নারীও রেহাই পায়নি, মাসিক প্রতিবন্ধী ভাতার সামান্য টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে সে টাঙ্গাইল জেলার একজন প্রতিবন্ধী মহিলাকে বিবাহ করে।আসামী মহিদুলের কাছে নৌবাহিনীর ভূয়া আইডি কার্ড, বাহিনীর ব্যবহার্য ট্রাকস্যুট এবং বিভিন্ন বাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি পাওয়া গেছে।

মহিদুল সহ অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে জামালপুর ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক প্রতারণা মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।আসামীদের দ্রুত বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে।এ ঘটনায় জড়িত প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের নিমিত্তে অভিযান অব্যাহত আছে।