মরণদশায় খননকৃত ৯০ কি.মি নদ, কপোতাক্ষে ফের পলি

খননকৃত কপোতাক্ষ নদে ফের পলি জমতে শুরু করেছে। মরণদশা থেকে বেঁচেও এরই মধ্যে ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদ আবারও মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

২৫ লাখ জনগোষ্ঠীর কপোতাক্ষ অববাহিকার বাসিন্দারা বলছেন কপোতাক্ষ রক্ষায় টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট বা জোয়ারাধার) প্রকল্প চালু করেও এবার নদের মাঝ বরাবর ক্রসড্যাম না দেওয়ায় তালা উপজেলার পাখিমারা জোয়ারাধারে পলি অবক্ষেপিত হচ্ছে না।

একইভাবে কপোতাক্ষে জোয়ারে আসা পলি জমে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এখনই এই পলি জমা রোধ করতে না পারলে এখানকার টিআরএম প্রকল্প ভেস্তে যেতে পারে এমন আশংকা তাদের। তারা আরও বলেন এ ধরনের জটিলতার কারণে যশোরের বিল খুকশিয়া ও বিল কপালিয়ার জোয়ারাধার প্রকল্প লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। একই কারণে এলাকাবাসী কপোতাক্ষ অববাহিকায় আগের মতো ভয়াবহ জলাবদ্ধতার আশংকা করছেন। এ বিষয়ে কেন্দ্রিয় পানি কমিটি সোমবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে যে নিয়ম অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসের দিকে পলি আসার আগে নদীতে ক্রসড্যাম দিতে হয়। কয়েকমাস পর বর্ষা মওসুম শুরু হতেই তা অপসারন করে নদী উন্মুক্ত করে দিতে হয়। তারা জানান এবার ৬৪ লাখ টাকার বরাদ্দ পেয়ে ক্রসড্যামের কাজ শুরু করলেও তা এখনও শেষ হয়নি। অথচ বর্ষা মওসুম আগত প্রায়। ফলে কপোতাক্ষে পলি জমা হচ্ছে শত শত টন।

অন্যদিকে এর সাথে সংযুক্ত পাখিমারা জোয়ারাধার প্রকল্পে পলি অবক্ষেপিত হতে পারছে না। ফলে সেখানে মাটি ভরাটও হ্রাস পেয়েছে। জোয়ারাধার প্রকল্পের আওতায় প্রায় আড়াই হাজার কৃষক পরিবার ক্ষতির মুখে পড়েছে। নদীতে ৮০ ভাগ পলি আসে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে। তারা আরও জানান জোয়ারাধার বা টিআরএম এর প্রধান লক্ষ্য হ”েছ খননকৃত নদী যাতে ফের পলি পড়ে ভরাট না হয়। একই সাথে সাগর থেকে আসা পলি যাতে টিআরএম বিলে অবক্ষেপিত হয়ে বিলটি দ্রুত ভরাট হতে পারে।

তারা জানান যথাসময়ে ক্রসড্যাম নির্মিত না হওয়ায় এরই মধ্যে খননকৃত নদের এক তৃতীয়াংশ পলি দ্বারা ভরাট হয়ে গেছে। তারা আরও বলেন নদের মুখে কাটপয়েন্টের উজানে ক্রসড্যাম নির্মান জরুরি ছিল। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন শেষে পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম, উপজেলা কমিটির সভাপতি ময়নুল ইসলাম, সেক্রেটারি মীর জিল্লুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আলাউদ্দিন জোয়ার্দার ও অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রী বরাবর এক সপ্তাহের মধ্যে ক্রসড্যাম সম্পন্ন করা সহ তিন দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ খনন এবং টিআরএম বাস্তবায়নে যেসব শর্ত ছিল তার মধ্যে প্রতি বছর শত ফুটেরও বেশি চওড়া ক্রসড্যাম দেওয়া ও তা যথাসময়ে অপসারনের বিষয় উল্লেখ ছিল।

গত বছর এ কাজে বরাদ্দ ছিল ৮৬ লাখ টাকা। অথচ এবার কোনো কাজই দৃশ্যমান না হওয়ায় কপোতাক্ষ ফের মরণ দশার দিক ঝুঁকে পড়ছে বলে জানিয়েছেন ¯’ানীয়রা। কপোতাক্ষ সংযুক্ত পাখিমারা টিআরএম প্রকল্পে ক্রসড্যাম না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কেশবপুর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মো. সাঈদুর রহমান জানান ক্রসড্যাম আমরা ফেব্রুয়ারিতে শুরু করেছিলাম। কিš‘ কপোতাক্ষ খননের পর এর পানির ভলিউম এবং স্ধেসঢ়;্রাত ও জোয়ারভাটা বেড়ে গেছে। ফলে চাকলা ব্রীজের কাছে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পাখিমারা ক্রসড্যামও ধসে গেছে। বৃষ্টির কারণে নতুন করে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। ফের কাজ শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এই ক্রসড্যাম সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।