ময়মনসিংহে ট্রেনের বগী লাইনচ্যুত,৩ ঘন্টা পর সচল

ময়মনসিংহে একই রেল সড়কে বারবার ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটছে। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর বলাশপুর এলাকায় ট্রেন লাইনচ্যূত হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর সাড়ে ১০টার দিকে বগি উদ্ধার করা হয়। এতে ময়মনসিংহের সাথে চট্রগ্রাম,মোহনগঞ্জ-জারিয়াগামি ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।

এ নিয়ে ১৫ দিনের ব্যবধানে তিনবার এবং এইবছর চারবারের মতো একই এলাকায় ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হলো। এর আগে গত ১১ ও ১৭ ডিসেম্বর এবং ১৭ সেপ্টেম্বর নগরীর বলাশপুর এলাকায় ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। ফলে এই রেল সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

দীর্ঘদিন লাইন সংস্কার না হওয়া,লাইনের ত্রুটি, চাকার ত্রুটি, সীমিত গতির স্থানে গতি বাড়িয়ে চালানো, ব্রেক কষা ইত্যাদি নানা বিষয়কে দূর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে ময়মনসিংহের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১১ ডিসেম্বর সকাল সোয়া ৮ টার দিকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন থেকে ছেড়ে যাওয়া চট্টগ্রামগামী ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি বলাশপুর এলাকায় লাইনচ্যুত হয়। গত ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটের দিকে একই ট্রেনের একটি বগি বলাশপুর এলাকায় ফের লাইনচ্যুত হয়।

এছাড়াও গত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর একই রুটের দুটি ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে জারিয়া থেকে ঢাকাগামী বলাকা কমিউটার ট্রেনের এসএলআর (মালবাহী-যাত্রীবাহী) বগি বলাশপুরে লাইনচ্যুত হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে ময়মনসিংহে থেকে ছেড়ে যাওয়া চট্রগ্রামগামী ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি নগরীর শম্ভুগঞ্জে লাইনচ্যুত হয়। এর আগে গত ২০২০ সালের জানুয়ারিতে একই রুটে চারটি ট্রেন লাইচ্যুতির ঘটনা ঘটেছিল। ২০২১ সালের ২৭ আগস্ট মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী একটি আন্তনগর ট্রেন নগরীর বলাশপুর এলাকায় চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা সানজির আহমেদ ডালিম বলেন, বলাশপুর-কেওয়াটখালী-শম্ভুগঞ্জ রেল সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েক বছরে এই রুটে বারবার ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া জরুরী। না হলে যেকোন সময় বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে। গৌরীপুরের ট্রেনযাত্রী রিয়াজুল হাসনাত বলেন, সড়ক পথের চেয়ে নিরাপদে চলাচলের জন্য রেলে ভ্রমন করি। কিন্তু এই রুটে বারবার দূর্ঘটনায় আমরা যাত্রীরা আতঙ্কিত।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, পূর্বের স্থানেই সোমবার সকালে ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগির দুটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। মূলত বলাশপুর এলাকায় রেল সড়ক দিয়ে অন্য সব ট্রেন চললেও একই ট্রেনের বগি লাইনচুত হচ্ছিল। মূলত ট্রেনটির বগির ট্রলির সমস্যা। সোমবার ট্রেনটি মেরামতের জন্য চট্টগ্রামে পাহাড়তলির কারখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

ময়মনসিংহের রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ প্রসাদ সরকার বলেন, এক বছরে চারবার একই ট্রেনের একই বগি লাইনচ্যুত হলো। দুটি তদন্তের লাইনের ত্র“টির কথা বলা হলে লাইন মেরামত করা হয়। কিন্তু এই রুটে অন্য সব ট্রেন চললেও একই ট্রেনের একই বগি লাইনচ্যুত হচ্ছিল। এতে স্পষ্ট হয়েছে সমস্যা বগিরই।

তিনি আরও বলেন, ট্রেনের ট্রলির সমস্যা, গতি বাড়িয়ে চলা, অনেক সময় জোরে ব্রেককষা নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। বলাশপুর-কেওয়াটখালী এলাকায় লাইনটি দীর্ঘদিনের পুরোনো। মেরামত করা হলেও নানা ত্রুটি থেকেই যায়। ময়মনসিংহ থেকে গৌরীপুর পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার রেল সড়কের বিভিন্ন স্থানে লাইন মেরামতের জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়েছে। সংস্কার কাজ হলে লাইনটি ঠিক হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে দূর্ঘটনা কমে যাবে।