রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে খেলা করলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত ও বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া রোহিঙ্গা শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী খেলাধুলায় ব্যস্ত ছিলেন। ফাঁকে ফাঁকে রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরীদের কাছে জানতে চাইলেন, তারা এখানে কেমন আছে?

জবাবে রোহিঙ্গা কিশোরীরা প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে বললেন, মিয়ানমারের নিজ বসতবাড়িতে গিয়ে এভাবে খেলাধুলা করে দিনযাপন করতে পারলে আরও ভালো লাগত।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প-১ এর কর্মরত কোডেক ও ইউনিসেফ যৌথ পরিচালিত শিশুবান্ধব কেন্দ্রে অবস্থানকালে তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের মনের আকুতি-চিন্তাচেতনা সম্পর্কে অবহিত হন।

এ সময় তিনি শিশুদের সঙ্গে লুডু, ভাগাডুলি, রান্নাবাটি, রশি নিয়ে লাফালাফি, ক্যারাম, স্বাস্থ্যলুডু, দাবা, পৃথিবী ভ্রমণসহ মাঠে নেমে ফুটবল খেলেন। পরে রোহিঙ্গা শিশু, কিশোর-কিশোরীদের হাতে আঁকা বিভিন্ন ছবি দেখেন এবং তাদের অনুভূতি জানতে চান।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে প্রতিষ্ঠিত কোডেক ও ইউনিসেফ পরিচালিত শিশুবান্ধব কেন্দ্রে বেড়ে উঠা রোহিঙ্গা শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা যাচাই করেন।

এ সময় প্রিয়াঙ্কা চোপড়া মিয়ানমারে সামরিক জান্তা কর্তৃক নির্যাতনের কথা জানতে চাইলে শিশুবান্ধব কেন্দ্রের ছাত্রী, মিয়ানমার বলি বাজারের বাসিন্দা খুরশেদা খাতুন (১৪) বলিউড অভিনেত্রীকে জানান, মিয়ানমারের তাদের অসহনীয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। যে জন্য তারা সপরিবারে এখানে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।

এ সময় একই গ্রামের শিশুবান্ধব কেন্দ্রের আরেক ছাত্র মনজুর আলী (১৩) প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে জানান, মিয়ানমার সেনারা তাদের চোখের সামনে মা, বোনকে ধর্ষণ করেছে। গ্রামের লোকজনকে কুপিয়ে, গুলি করে হত্যা করেছে। শিশুদের আগুনে নিক্ষেপ করে মেরেছে।

এসব লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা শুনে সাবেক এই বিশ্বসুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে তিনি শিশুবান্ধব কেন্দ্রের কিশোর-কিশোরীদের বলেন, তিনি তার দক্ষতা,ক্ষমতার সার্বিক প্রয়োগের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা যেন মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে পারে সেজন্য ইউনিসেফের পক্ষ হয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে এ দাবি তুলে ধরবেন।

এ সময় শিশুবান্ধব কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নাছির উদ্দিন, যোগাযোগ কর্মকর্তা লুৎফুর রহমানের কাছে প্রিয়াঙ্কা জানতে চান, এখানে রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েরা কী ধরনের সেবা পাচ্ছে?

উত্তরে তারা বলেন, মিয়ানমারে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এ দেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরীদের মাঝে যে আতংক বিরাজমান ছিল শিশুবান্ধব কেন্দ্রে বিভিন্ন খেলাধুলার মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের অন্তর থেকে ক্রমশ সেই ভয়াবহ নির্যাতনের কথা ভুলে যেতে বসেছে। তারা এখানে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে পড়ালেখা ও খেলাধুলা করতে পেরে আনন্দবোধ করছে।

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা লালু মাঝি বলেন, রাখাইনে শিক্ষার হার কম হলেও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুর সঙ্গে তারা পরিচিত। টিভি, ভিসিডি ও মোবাইল নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন রোহিঙ্গারা। বিশেষ করে ভারতীয় নানা ছবিতে ছেয়ে গেছে রাখাইন প্রদেশ। এ কারণে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া রোহিঙ্গাদের খুবই পরিচিতমুখ।

প্রসঙ্গত, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বেসরকারি একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর সড়কপথে তিনি ইনানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ওঠেন। সেখান বিকাল ৪টার দিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে এবং খোঁজখবর নিতে টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

উল্লেখ্য, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এ সফরে এসেছেন ইউনিসেফের পক্ষ হয়ে। প্রকৃতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করে চলেছেন এ বলিউড অভিনেত্রী। এর আগে গত বছর প্রিয়াঙ্কা গিয়েছিলেন জর্ডানে, সিরিয়ান শরণার্থী শিশুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রিয়াঙ্কা লিখেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করব এবং সেখানকার সব অভিজ্ঞতা শেয়ার করব ইনস্টাগ্রামে। এ বিষয়টি নিয়ে সারা বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত। ভাবা উচিত আমাদেরও।