পরিস্থিতি আরো অবনতি : ষাট বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে যমুনা

ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে এখন যে পানিপ্রবাহ তা গত ষাট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে মঙ্গলবার সকালে আগের সর্বোচ্চ পানি সমতল রেকর্ডের ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা নদীর নুনখাওয়া, চিলমারি, সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জ এবং আরিচার মতো স্পর্শকাতর পয়েন্টে আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর ফলে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম এবং সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদ-নদী ও হাওরের পানি বেড়ে বন্যায় দেশের অনেকগুলো জেলা তলিয়ে গেছে। দেশের উত্তরে কয়েক জেলায় উন্নতি এবং কয়েকটিতে অবনতির মধ্যে ঢাকার নিম্নাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের ৯ জেলাতেও বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেজন্য নিজেরা প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।

সাধারণত গঙ্গা অববাহিকায় আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ভারতের বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও নেপালে বন্যা হয়। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ে।কিন্তু এবারের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন । বলা হচ্ছে ১৯৮৮ সালের বন্যা পরিস্থির চেয়ে অবনতি হতে পারে এবারের বন্যায়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: রিয়াজ আহমেদ বলেন, নেপাল ও ভারতের বিহারে বন্যা পরিস্থিতির কারণে গঙ্গা-পদ্মায় আগামী তিন দিন পানি আরো বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। সে হিসাবে আগামী ১৯-২০ তারিখ নাগাদ বন্যাকবলিত হয়ে পড়তে পারে ঢাকার নিম্নাঞ্চলসহ মধ্যাঞ্চলের ৯ জেলা।

১৯৮৮ সালের বন্যায় দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা ডুবে গিয়েছিল। স্থানভেদে এই বন্যাটি ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দেশের প্রায় ৮২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কলেরা আর ডায়রিয়াসহ নানা রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এবারের বন্যা ১৯৮৮ সালের বন্যার চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেশের ২০ জেলার ৫৬ উপজেলা বন্যাকবলিত।ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৬ লাখ মানুষ। তবে ১৯৮৮ সালের চেয়ে বড় বন্যা হলেও মোকাবিলার প্রস্তুতি আছে সরকারের।’

এদিকে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ১১৪ সে:মি:উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ৪৫ কিলোমিটার যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ(বিআরই) বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্র জানায় ,যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৬০ টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দী হযে পড়েছে। কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ২হাজার ২২৫হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে।

সারাদেশে বন্যা কবলিত জেলাগুলোর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে লালমনিরহাটে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। দিনাজপুরে দুই ও কুড়িগ্রামে মৃত্যু হয়েছে একজনের। সারাদেশে প্রায় অর্ধশতাধিকের বেশি মানুষের প্রাণহানী ঘটে।বন্ধ হয়ে গেছে বন্যা কবলিত জেলাগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।