সাতক্ষীরায় ৪ মাসে ৬৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু-হত্যা, মামলা ৩৯

গোটা পৃথিবী মহামারি করোনায় যখন ধুঁকছে, তখন জেলায় প্রায় প্রতিদিন বেড়েই চলেছে অস্বাভিক মৃত্যুর ঘটনা!
সাতক্ষীরায় চার মাসে ৬৯টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব মৃত্যুর অধিকাংশই পারিবারিক কলহ, প্রেম ঘটিত, পরকীয়া এবং দারিদ্র্যের কারণে ঘটেছে বলে জানা গেছে। বিষপান ও গলায় ফাঁস দিয়ে এসব অপমৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলাও হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে এর বাইরেও আরও কিছু মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জেলার ৭টি উপজেলায় অস্বাভাবিক মৃত্যু বেড়েই চলেছে। এরমধ্যে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ১৬টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫টি, মার্চ মাসে ২২টি ও চলতি এপ্রিল মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত ১৬টি অস্বাভিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে অধিকাংশের ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুতির কাজ চলমান রয়েছে।

এদিকে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৯৭জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও ১৬জন বিষপান, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৩৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও ২৯ জন বিষপান, মার্চ মাসে ১৪১ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও ১৯জন বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। তারা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

অপরদিকে সাতক্ষীরা থানা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে খুন ১টি, সড়ক দুর্ঘটনা ২টি, বিষপান ২টি, গলায় ফাঁসে ২টি, শাসকষ্টে ১টি ও পানিতে ডুবে ১টিসহ মোট ৯টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ফেব্রুয়ারি মাসে খুন ১টি, সড়ক দুর্ঘটনায় ১টি, বিষপানে ২টি, গলায় ফাঁস ২টি ও অন্যান্য ৪টিসহ মোট ১০টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ১টি, বিষপানে ৫টি, গলায় ফাঁসে ৭টি ও অন্যান্য ২টিসহ মোট ১৫টি এবং চলতি এপ্রিল মাসে খুন ১টি, গলায় ফাঁসে ৩টি ও অন্যান্য ১টিসহ মোট ৫টি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড হয়েছে। এই মামলাগুলোর অধিকাংশই বিচারকাজ প্রক্রিয়াধীন।

এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত জানান, এই মৃত্যু জন্মগতভাবে হয় না। বরং এটি মানুষের অসাবধানতা, ভুল বোঝাবুঝি, একে অপরের সাথে মনোমালিন্য, মারামারি, হতাশা, অমনোযোগী, পারিবারিক কলহ, মাদক গ্রহণ, সড়ক দুর্ঘটনা ও উদাসীনতার জন্য হচ্ছে। যখন এই রোগীদের স্বজনরা হাসপাতালে নিয়ে আসছে তখন তাদের শারীরিক অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকি তাদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী হাসপাতালে আসার আগেই মারা যাচ্ছে। এছাড়াও কিছু কিছু রোগী সঠিক চিকিৎসা পেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। কিন্তু কয়েক বছর পরেও তাদের অবস্থা অস্বাভাবিক হয়ে যায়। এর থেকে মানুষকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় কাউন্সিলিং। এটি বাস্তবায়ন হলে এই মৃত্যুহার স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে।

এবিষয়ে মানবাধিকার কর্মী সাকিবুর রহমান বাবলা জানান, পরিবারের নিরাপত্তাহীনতা ও বিভিন্ন ধরণের চাপ ও দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিশেষ করে আয়ের সংস্থান কমে যাওয়ায় সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দৈনন্দিন ঝগড়াঝাটি ও মত পার্থক্য অনেক বেড়েছে। এর জেরে অধিকাংশ নারী পুরুষের দ্বারা মানসিক ও শারীরিক নিপীড়নে দুর্বলতর হচ্ছেন। তারই বহিঃপ্রকাশ এই অস্বাভাবিক মৃত্যু। তবে এর কোনো পরিসংখ্যান সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা রাখেন না। ফলে সঠিকভাবে তথ্য জনমানুষের সামনে উপস্থাপন করাও মুশকিল।

তিনি আরও জানান, উন্নত দেশে অস্বাভাবিক মৃত্যু রোধ করতে সরকার বৃহত্তর উদ্যোগ নেয়। অথচ আমাদের দেশে সেই উদ্যোগের বহিঃপ্রকাশ চোখে পড়ে না। এমনকি বিভিন্ন দেশীয় কিছু কিছু এনজিও এই মৃত্যু রোধ করার উদ্দেশ্যে কাজ করলেও তাদের কর্মী এবং আর্থিক সংকটের জন্য জনমানুষকে ঠিকভাবে কাউন্সিলিং করতে পারছেন না। ফলে বেড়েই চলেছে মৃত্যু। এই মৃত্যু কমানোর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিদের এখনই উদ্যোগ নেওয়া জরুরী।

বিষয়টি সম্পর্কে সাতক্ষীরা থানার স্টেটমেন্ট কর্মকর্তা সাব-ইন্সেপেক্টার আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, গত ৪ মাসে সাতক্ষীরা থানায় ৩৯টি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়েছে। প্রত্যেকটি মামলা বিচার প্রক্রিয়াধীন আছে।