সিরিয়ার যুদ্ধকে কিভাবে দেখছে সে দেশের মানুষ?

সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সাত বছরে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ সিরিয়া থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ লেবাননে।

এই শরণার্থীদের অধিকাংশ যুদ্ধের সহিংসতা থেকে বাঁচার জন্য সিরিয়া ছাড়লেও, অনেকেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়ে।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে পালিয়ে আসা ২৩ বছর বয়সী একজন সিরিয়ান নারী বলেন, রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকার কারণে সিরিয়া ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

ওই নারী বলেন, ‘সিরিয়া সরকারের ধারণা ছিল আমি সরকারবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত ছিলাম। আমার কিছুদিন জেলেও থাকতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আসাদ সরকারের অধীনে সিরিয়ানদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। সরকারের বিরোধিতা করলেই নানাভাবে হয়রানি করা হয় সিরিয়ানদের।’

কিন্তু সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিদেশি শক্তিগুলোর অন্তর্ভুক্তি অবস্থা আরো খারাপ করছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আসাদ সরকারের অধীনে সিরিয়া, কিন্তু বিদেশি শক্তি সিরিয়ায় গিয়ে সেখানকার অবস্থা আরো খারাপ করেছে।’

সাম্প্রতিক মিসাইল আক্রমণকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্স আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান বললেও সিরিয়ানরা সেরকম মনে করে না। বৈরুতের আমেরিকান ইউনিভার্সিটির সিনিয়র ফেলো রামি কৌরির মতে, পশ্চিমারা এই হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের আঞ্চলিক প্রতিপত্তি অক্ষুণ্ন রাখতে চাইছে।

কৌরি বলেন, ‘আসাদ সরকারের মিত্র রাশিয়া, ইরান ও হিজবুল্লাহ জঙ্গিরা এই অঞ্চলে শক্তিশালী অবস্থান নিক তা পশ্চিমারা চায় না।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব ধরে রাখার একটি কৌশল বলে মনে করেন কৌরি। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মিসাইল শুধু সিরিয়ার রাসায়নিক পরীক্ষাগারে আঘাত করলে খুব একটা প্রতিক্রিয়া হয়তো হবে না, কিন্তু হিজবুল্লাহর ওপর বা ইরানে যদি মিসাইল হামলা হয় তাহলে ইরানের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। এই অঞ্চলে অনেক বছর ধরেই এই অস্থির অবস্থা চলছে আর খুব দ্রুত হয়তো এই অবস্থার উন্নতি হবে না।’

আসাদ সরকারবিরোধী আন্দোলনের শুরুতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এমন একজন এখন বৈরুতের ক্যাম্পে থাকা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ ব্যক্তি ২০১৪ তে সিরিয়া ছাড়েন। তিনি মনে করেন সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা কোনোভাবেই আসাদ সরকারকে হটাতে সহায়তা করবে না। তিনি বলেন, ‘এখানকার অধিকাংশ শরণার্থীই তাদের নিজেদের দেশে ফিরতে চায়। কিন্তু তারা ফিরে গিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা চায়। আর আসাদ সরকারের অধীনে সেটি অর্জন করা সম্ভব না।’

‘আর এখন সিরিয়ায় যে পশ্চিমা হামলা চলছে সেটি আসাদ সরকারের হত্যাকান্ডকে শুধু অন্য একটি রুপ দিচ্ছে। এভাবে কখনো সিরিয়ায় শান্তি ফিরবে না’ তবে এই যুদ্ধ পুরো সিরিয়াকে বিধ্বস্ত করে দিলেও, বিস্ময়করভাবে রাজধানী দামেস্কের মানুষ তেমন প্রভাবিত হয়নি এই যুদ্ধে।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে গাড়ি করে বৈরুত আসতে দুই ঘণ্টার মতো সময় লাগে। পরিবারের সদস্য আর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে অনেকেই তাই নিয়মিত বৈরুতে আসেন।

তেমনই একজন নারী বলছিলেন দামেস্কের মানুষ সিরিয়া যুদ্ধে আসলে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মিডিয়ায় যতটা দেখানো হচ্ছে দামেস্কে আসলে ততটা প্রভাব পড়ছে না। সেখানকার অধিকাংশ মানুষই স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যাচ্ছে।’

তবে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের মানুষের মধ্যে যুদ্ধের প্রভাব না পড়লেও, বাকি সিরিয়া পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক শক্তিদের কৌশলগত যুদ্ধক্ষেত্রে।