সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে সম্মত বিজিবি-বিএসএফ

সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হযেছে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। সীমান্তে যেন কোনো ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড না ঘটে সেটি ঠেকাতে প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনা করবে দুই বাহিনী।

এছাড়া দু’দেশের ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচিসহ প্রয়োজনীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়ার বিষয়েও উপনীত হয়ে দুই বাহিনী।

ভারতের গুয়াহাটি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫১তম সীমান্ত সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে দুই বাহিনীর মহাপরিচালকের যৌথ প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) উভয় দেশের ডিজি পর্যায়ে আলোচনা শেষ সীমান্ত সম্মেলন হয়েছে। শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিজিবি’র প্রতিনিধিদল ভারতের গৌহাটি থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে।

সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ, ভারতীয় নাগরিক, দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, আহত, মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সর্বদা দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্কের প্রশংসা করে। তারা প্রত্যাশা করে বিজিবি এবং বিএসএফ সীমান্ত হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে এবং অপরাধীদের হত্যার না কে হস্তান্তরের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।

সীমান্তে হত্যার ঘটনা কমিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছেন বিএসএফ মহাপরিচালক। সীমান্তে মানবাধিকার রক্ষা ও সহিংসতা রোধে যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উভয় পক্ষই সীমান্তে জনসচেতনতা কর্মসূচি জোরদারকরণ, দুর্গম অঞ্চলে যথাযথ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সমন্বিত টহল বৃদ্ধি করে সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একমত হন।

এদিকে, বিজিবি মহাপরিচালক ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই আস্তানাগুলো ধ্বংস করার জন্য অনুরোধ করেন বিএসএফ মহাপরিচালককে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক ওই সব আস্তানার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

বিজিবি মহাপরিচালক সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধরনের আন্তসীমান্ত অপরাধ যেমন- মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবা পাচার, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, গবাদি পশু, জালমূদ্রা, স্বর্ণ প্রভৃতি চোরাচালানের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এসব অপরাধ দমনের জন্য বিএসএফ’র সহযোগিতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, অবৈধ মাদক পাচারের ফলে দু’দেশের যুব সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি মারাত্মকভাবে বেড়েছে যা উভয়ের জন্যই বিপদজনক। এটাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা দরকার। এ ব্যাপারে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে। চোরাকারবারীদের সম্পর্কিত এমন তাৎক্ষণিক ও দরকারি তথ্য পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান এবং প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে উভয়পক্ষ সম্মত হন।

সম্মেলনে বিজিবি’র মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেন।ওপরদিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র মহাপরিচালক শ্রী রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন সম্মেলনে।

বৈঠকে উভয়পক্ষ বিদ্যমান পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছে।