খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিত্যক্ত সেনাক্যাম্পে পুলিশ-বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পর পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর পরিত্যক্ত ক্যাম্পগুলোতে শীঘ্রই বিজিবি, পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়িতে জেলা প্রশাসনের আয়োজিত বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা সভায় এমনি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি।
বৃহস্পতিবার(২৪শে ডিসেম্বর) বিকেলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘শান্তি চুক্তির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা থেকে সেনা প্রত্যাহার করার পর পরিত্যক্ত থাকা সেনা ক্যাম্পগুলোতে বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের দৌরাত্ম্য কমাতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলে দ্রæত তা বাস্তবায়ন করা হবে।’

মন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্রগ্রামের পাহাড়ি-বাঙ্গালী সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্য ভূমি সমস্যা থেকে শুরু করে এর যা যা অন্তরায় রয়েছে সবগুলো সমাধান করা হবে। আমরা পার্বত্য অঞ্চলকে একটি শান্তির এলাকা হিসেবে দেখতে চাই। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, এ কথাটাই আমরা এখানে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমরা চাই, পার্বত্য চট্রগ্রাম সমতল ভূমির সাথে তাল মিলিয়ে একসাথে চলবে।

তিনি আরও বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যা কিছু করার প্রয়োজন তা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা রক্তপাতহীনভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা দুর্বল নই, কেউ যদি মনে করে আমরা দূর্বল তাহলে সেটা হবে ভুল। আমরা বল প্রয়োগ করতে চাই না। আমাদের বিশ্বাস আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস’র সভাপতিত্বে এ বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স’র চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী সমমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
উন্মুক্ত আলোচনায় খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র মো: রফিকুল আলম, জেলার মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা, দীঘিনালা উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মো: কাশেম, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো: রইছ উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এ সময় মন্ত্রীর একান্ত সচিব দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: শাহরিয়ার জামান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিজিবির রিজিয়নাল কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফরিদুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রæু চৌধুরী অপু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু, খাগড়াছড়ি বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম, ডিজিএফআই ডেট কমান্ডার কর্নেল মুহাম্মদ মালেক হোসেন সদর জোন কমান্ডার কর্নেল জাহিদুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের প্রতিনিধি মেজর এমএম সালাহউদ্দিন, পুলিশ সুপার মো: আব্দুল আজিজসহ সামরিক-বেসামরিক ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর তিন পার্বত্য জেলা থেকে স্থানীয়দের বাঁধা ও প্রতিবাদ উপেক্ষা করে পর্যায়ক্রমে ২৫০টি নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। একের পর এক নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহার করে নেয়ার ফলে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম যেমন অরক্ষিত হয়, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পরিধি ও সশস্ত্র গ্রæুপগুলোর এলাকায় আতিপত্য বিস্তারের লড়াই, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যার মত ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ নিরাপত্তার স্বার্থে প্রত্যাহারকৃত সকল নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্প পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে সেনা প্রত্যাহারকৃত ক্যাম্প পুন: স্থাপন করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্ছলিক পরিষদের চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী) জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্ত্র লারমা মনে করেন পার্বত্য শান্তি চুক্তি বিরোধীতা করা ও লংঘনে অভিযোগ করেন।