সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে অবৈধ অটো রাইস মিলের ধোঁয়া ও ছাইয়ে অতিষ্ঠ জনজীবনে

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর এলাকায় অবস্থিত সরকারি খাস জায়গায় মেসার্স ফারুকী সেমি অটো রাইস মিলর বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, উড়ে আসা তুষ, কুড়া ও ছাইয়ে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি স্থানীয় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে মিলের আশপাশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগ-ব্যাধিতে। অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল।

আর ওই সেমি অটো রাইস মিলের মালিক হলেন মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মাহবুব আলম ফারুকী ও বিভু রায় ওই দুইজন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলার সাহস পায়না।

মধ্যনগর-মহেশখালা সড়ক বাজার সংলগ্ন এলাকায় ২০০৬ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাত্রপত্র ছাড়াই ফারুকী সেমি অটো রাইস মিলটি স্থাপন করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এতে করে অটো রাইস মিলের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ছাই ও কাড়ার প্রভাবে মারাত্নক হুমিকির মুখে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্টান ও ব্যাংক, থানা বসতঘরসহ জনজীবন ও বিপর্যস্ত হচ্ছে প্রকৃতির পরিবেশ। অন্যদিকে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে শিশু ও বয়স্কদের।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের মধ্যনগর বাজারে মধ্যনগর বি পি উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ সংলগ্ল স্থানে মেসার্স ফারুকী সেমি অটো রাইস মিল নামক ওই মিলটি ২০০৬ সালে গড়ে তোলেন মধ্যনগর ইউনিয়নের ফারুকনগর গ্রামের বাসিন্দা ও মধ্যনগর বাজারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও মধ্যনগর থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মাহবুব আলম ফারুকী ও বিভু রায়।

অবৈধভাবে গড়ে উঠা ওই রাইছ মিলটির পশ্চিম মধ্যনগর বিপি উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ ও মধ্যনগর মাদ্রাসা, মধ্যনগর থানা । উওর পাশে রয়েছে কৃষি ব্যাংক, দক্ষিণ ও পৃর্ব পাশে রয়েছে বৃহত্তর ধানেরহাট পৃর্ব আর মিলের পাশেই রয়েছে অনেক বাসাবাড়ীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্টান। ওই মিলের পাকা একটি ছোট ভাঙা চিমনি দিয়ে বের হচ্ছে এ মিলের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। মিল থেকে উড়ছে ছাই, তুষ ও কুড়া। সেই উড়ন্ত ছাই, তুষ ও কুড়া গিয়ে পড়ছে আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্টান ও কৃষি ব্যাংক এবং মধ্যনগর থানাসহ বাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তায়।

ফারুকী সেমি অটো রাইস মিলটি স্কুল এন্ড কলেজ ও মাদ্রাসা সংলগ্ন হওয়ায় কারনে ওই মিলের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ছাই ও কুড়ার কারেনে শিক্ষার্থীরা এবং স্থানীয় বসবাসকারীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সর্দি – কাশি আর শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রাত হয়ে থাকে।

মধ্যনগর বাজারের বাসিন্দা ফজলু মিয়া বলেন, অটো রাইস মিলের কারণে বর্তমানে বাড়িতে বসবাস করা খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিলের উড়ন্ত ছাই, তুষ ও কুড়া ঘরের হাঁড়ি-পাতিলে গিয়ে পড়ে। বাড়ি ঘর, ছাইয়ের আবরণে কালো বর্ণের হয়ে গেছে। মিলের কারণে এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ সর্দি- শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে মিলের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

দোকানদার আনারুল বলেন, মিলের উড়ন্ত ছাই, তুষ ও কুড়া রাস্তায় চলাচলকারী পথচারী ও বিভিন্ন গাড়ি চালকদের চোখে পড়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। এতে অনেক সময় রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে।

মেসার্স ফারুকী সেমি অটো রাইস মিলের মালিক বিভু রায়ের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমি এ বিষয়টি নিয়ে আপনার সাথে বসে চা খেতে চাই আপনি আমার মিলে আসেন দয়া করে।

মেসার্স ফারুকী সেমি অটো রাইস মিলের আরেক মালিক মধ্যনগর থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মাহবুব আলম ফারুকীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন না ধরায় তাঁর সাথে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান খান বলেন, ওই সেমি আটো রাইস মিলের লাইসেন্স নবায়ন করাসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র যদি না থাকে তা হলে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে ওই মিলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে সিলেট পরিবশে অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।