হবিগঞ্জে ৫টি চোরাই গাড়ি উদ্ধার, আটক ২

হবিগঞ্জে আন্তঃভিবাগীয় চোরাই সিন্ডিকেটের প্রধান কথিত সাংবাদিক শহরের সদর হাসপাতাল সড়কের মের্সাস মা ফার্মেসীর মালিক এ এইচ রুবেল ও তার সহযোগী মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জলকে আটক করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তবে গাড়ী চোর সিন্ডিকেটের সেকেন্ড ইন কমান্ড তারেকুল ইসলাম অলি ওরফে অকশন তারেক পালিয়ে যায়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের ৩টি প্রাইভেট কার, ২টি মাইক্রোবাস, ৩০ থেকে ৪০টি গাড়ির চাবি, ১৫/২০টি নিলামের ভূয়া কাগজপত্র, ম্যাজিস্ট্রের সীল, ডাক্তারের সীল, কম্পিউটারের হার্ডডিক্স, ল্যাপটপ, সিসি টিভির ফুটেজ ও বেশ কয়েকটি চেক উদ্ধার করে ডিবি।

মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি টিম অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।

ডিবির একজন সিনিয়র এএসপি’র নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে এ ব্যাপারে এখনি তারা কিছু বলতে না নারাজ। অভিযান পরিচালনাকারী টিমের একজন সদস্য জানালেন অভিযান শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হবে।

পুলিশ সুত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরের অন্ততপুর এলাকার বাসিন্দা কৃষক মহিউদ্দিন আহমেদের পুত্র এক সময় ফার্মেসীর কর্মচারী কথিত সাংবাদিক এ এইচ রুবেল, শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা মোঃ রহমান আলীর পুত্র তারেকুল ইসলাম অলি ওরফে অকশন তারেক, মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হৃদয় পাঠান উজ্জল সহ ১৫ থেকে ২০ জনের সদস্য মিলে আন্তঃবিভাগীয় গাড়ি চোর সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। তারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজি, মোটর সাইকেল চুরি করে এনে হবিগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূয়া নিলামের কাগজ বানিয়ে বিক্রি করে আসছিল।

সম্প্রতি ঢাকা থেকে একজন সংসদ সদস্যের মেয়ের প্রাইভেট কার চুরি হয়। এ ঘটনায় ঢাকার একটি থানায় গাড়ি চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার অনুসন্ধানে নামেন ডিএমপি ডিবি।

মামলার সুত্র ধরে তদন্তকারী কর্মকর্তার মাঠে নামার পর বেড়িয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এই তথ্যে ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল সংলগ্ন জেলা পরিষদ মার্কেটের মের্সাস মা ফার্মেসীর মালিক কথিত সাংবাদিক এ এইচ রুবেল এর ফার্মেসীতে অভিযান চালিয়ে একটি প্রাইভেট কার সহ তাকে আটক করে পুলিশ। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে শহরের উত্তর শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা তারেকুল ইসলাম অলি ওরফে অকশন তারেকের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় তার বাসা থেকে একটি প্রাইভেট কার, ১৫টি গাড়ির চাবি, বেশ কয়েকটি নিলামের ভূয়া কাগজ, ম্যাজিস্ট্রেট ও ডাক্তারের সীল, হার্ডডিক্স, ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি আচঁ করতে পেরে তারেক পালিয়ে যায়। আটক রুবেল এর স্বীকারোক্তিতে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হৃদয় পাঠান উজ্জলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় উজ্জল এর কাছ থেকে দুইটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। এদিকে আটক রুবেল নিজেকে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার হবিগঞ্জ প্রতিনিধি বলে দাবী করে এবং তার কাছ থেকে জব্দকৃত গাড়িটিতেও স্টিকার যুক্ত ছিল। তাদের এ সব অপকর্মের সাথে অসাধু সরকারী কর্মকর্তারা, কর্মচারী, কথিপয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুক আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চোরাই গাড়ি ক্রয় করে এখানে এনে বিক্রি করছিল। ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মঙ্গলবার ভোর থেকে শহরে অভিযান চালায়। এর বাহিরে আমাদের কিছু জানা নেই।

গ্রেফতারকৃত এ এইচ রুবেল অনন্তপুর এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিনের ছেলে। তার নিকট থেকে একটি চোরাই প্রাইভেট কার ঢাকা মেট্রো গ (২৫-৫৫৭২) জব্দ করা হয়। যার নম্বারটি টেম্পারিং করা। এই গাড়ির প্রকৃত নাম্বার ঢাকা মেট্রো গ (২৫-৫০৭৪)। পরে তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে তার অন্যতম সহযোগি শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা রহমান আলীর পুত্র তারেকুল ইসলাম অলির বাসা থেকে আরও একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়। অভিযানের খবর পেয়ে তারেক পালিয়ে যায়। রুবেলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাধবপুরে অভিযান চালিয়ে তার আরেক সহযোগি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল পাঠানকে আটক করা হয়। তাকে কৃষ্ণনগরে তার বাসা থেকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যে অভিযান চালিয়ে মাধবপুর থেকে আরও দুইটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়।