১৫ বছর পর সেই লনু মিয়ার সন্ধান!

পনেরো বছর আগে সেই যে চা খওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তারপর থেকে তার কোনো খোঁজ মিলছিল না তার। এরই মধ্যে স্বামীর শোক বয়ে মারা গেছেন স্ত্রী আয়তুননেসা। ছেলে মেয়েরা অঝোরে কেঁদেছেন বাবার জন্য। কিন্তু কোনো কিনারা করতে পারেননি ।

অবশেষে ৭০ বছরের আবুল খায়ের ওরফে লনু মিয়াকে তার স্বজনরা খুঁজে পেলেন সাতক্ষীরার গ্রামে। টানা পনের বছরের হতাশা ও ব্যথা বেদনার সমাপ্তি ঘটলো, হাসি আর কান্নার সংমিশ্রণে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটল রোববার ।

লনু মিয়ার বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার পাঁচকিপাড়া গ্রামে। দিনমজুর লনু মিয়া অপ্রকৃতিস্থ ছিলেন না। তবে প্রায়ই তার কিছুটা মতিভ্রম ঘটত। দিনমজুরের কাজ করতেন মাঠে ঘাটে। দুই ছেলে পাঁচ মেয়ের বাবা লনু মিয়া একদিন বিকালে চা খাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।

তারপর থেকে ছিলেন নিরুদ্দেশ। পরিবারের সবাই তাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়েছেন। স্বামীর শোকে শয্যাশায়ী হয়ে ১৩ বছর আগে চিরবিদায় নিয়েছেন তার স্ত্রী আয়তুননেসা।

অবশেষে তার পরিবারে খবর গেলো আবুল খায়ের ওরফে লনু মিয়া সাতক্ষীরা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ত্রিশ মাইল মোড়ে চা দোকানি নুর ইসলামের তত্ত্বাবধানে একটি মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন।

সেখানে তার থাকার ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে। তিনি কথা বলতে পারেন না। কিছু বললে শুধু তাকিয়েই থাকেন। অসুস্থ লনু মিয়ার চিকিৎসার জন্য ওষুধপত্রও কিনে দেন নুর ইসলাম ও তার সহমর্মীরা। খবর পেয়ে মতলবের গ্রাম থেকে ছুটে আসেন লনু মিয়ার ছেলে শাহজাহান সরদার, ছোট ভাই শাহ আলম, নাতি ফারুক হোসেন। রোবাবার সকালে তারা এখানে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। তারা তাদের প্রিয় স্বজনকে পেয়ে অশ্রু সজল হয়ে ওঠেন।

অবশেষে তাকে নিয়ে রওনা দেন চাঁদপুরের উদ্দেশে। এ সময় তারা ধন্যবাদ জানান লনু মিয়াকে আশ্রয়দাতা চা দোকানি নুর ইসলাম ও অন্যদের। আর নির্বাক লনু মিয়া স্বজনদের সঙ্গে গাড়িতে ওঠার সময় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন তাদের দিকে।