ভূগর্ভস্থ পানির বহুমাত্রিক ব্যবহারের ফলে সম্পদটি দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে- জাহিদ ফারুক
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলছেন; অদৃশ্য সম্পদ ভূগর্ভস্থ পানির দৃশ্যমান প্রভাব সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বাড়াতেই এবারের বিশ্ব পানি দিবসে এই প্রতিপাদ্য। আমাদের দেশে ভূগর্ভস্থ পানির মূল ব্যবহার খাবার পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, সেচ কাজ এবং শিল্পক্ষেত্রে । ভূগর্ভস্থ পানির বহুমাত্রিক ব্যবহারের ফলে এর উপর আমাদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে, সম্পদটি দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে, এবং পর্যাপ্ত পূনঃভরণ হচ্ছেনা। ফলে জনসাধারণের সুপেয় পানি প্রাপ্যতা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ।
(৩ এপ্রিল) রাজধানীর পানি ভবনে “বিশ্ব পানি দিবস ২০২২” উদযাপন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠীত প্রেস ব্রিফিং তিনি এসব কথা বলেন।
ব্রিফিংকালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এমপি, সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ের শুরুতে প্রতিমন্ত্রী গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বশ্রদ্ধাচিত্রে স্মরণ করেন জাতির পিতার পরিবারবর্গের প্রতি যারা ১৫ই আগস্টের কাল রাতে শাহাদৎ বরণ করেন।
জাহিদ ফারুক বলেন; বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে; এবং ‘জাতীয় পানি নীতি, ১৯৯৯’ ‘বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩’, ‘বাংলাদেশ পানি বিধিমালা, ২০১৮’ এবং শতবর্ষ মেয়াদী ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’-এর মাধ্যমে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সারা বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির নিরাপদ অঞ্চল সীমা নির্ধারণের লক্ষ্যে রাজশাহী, চাপাই নবাবগঞ্জ এবং নওগা জেলায় প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় মৌজা পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ পানির অবস্থান নিরুপন পূর্বক ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করণ। পর্যায়ক্রমে সকল জেলায় ভূগর্ভস্থ পানির নিরাপদ অঞ্চল সীমা নির্ধারণের লক্ষ্যে মৌজা পর্যন্ত ম্যাপিং এর ব্যবস্থা করার জন্য প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমানোর জন্য ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারে উৎসাহিত করা এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য জনসাধারনকে উৎসাহিত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশে সেচ ব্যবস্থার ৮০% ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর ভূগর্ভ থেকে ৩০.২১ ঘন কি:মি: পানি উত্তোলন করা হয়, যার ৮৬ শতাংশই ব্যবহৃত হয় কৃষির সেচ কাজে। এই মাত্রাতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি সেচ কাজে ব্যবহারের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা মৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহৃত গভীর ও অগভীর নলকূপগুলো পানি সংকটের মুখে পড়ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের ৬৪ জেলার ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুন:খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ১,৫,০,০০০ হেক্টর জমিতে ভুুউপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। ডেল্টা প্ল্যান এর আওতায় দেশের ৬৪টি জেলায় প্রায় ৪৪৩৯ কি:মি: নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন করা হচ্ছে। ফলে ১০০টি ছোট নদী, ৩৯৬টি খাল ও ১৫টি জলাশয় পুনরুজ্জীবিত হবে। জলাশয়, খাল ও নদীর মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপিত হবে। শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহারের জন্য পানি ধরে রাখা সম্ভব হবে, নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং বন্যার প্রকোপ হ্রাস পাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে আনুমানিক ৫,২০,০০০ হেক্টর এলাকায় জলাবদ্ধতা, বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপর্যয় হতে জনসাধারণের পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। প্রায় ১,৩০,০০০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের ফলে বার্ষিক প্রায় ৩,৫০,০০০ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পটির ২য় পর্যায়ে ২১২টি ছোট নদী, ২০০৪টি খাল ও ৯৯টি জলাশয় পুন:খনন করা হবে যার মোট দৈর্ঘ্য ১৩৮৪৩.২৯ কি:মি:। দেশে ১৩৭টি সেচধর্মী প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে প্রায় ৬৫.১২ লক্ষ হেক্টর জমিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এতে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ১১১ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের উপকূলবর্তী ১৩ টি জেলায় ১৩৯টি পোল্ডারের মধ্যে ৬১টি পোল্ডারে বর্তমানে পুনর্বাসন কাজ চালু আছে। ২০২০-২১ অর্থ-বছরে সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলায় ১০৯০টি স্কীমে ৮৫৮ কিঃমিঃ ডুবন্ত বাঁধ পিআইসি’র দ্বারা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করার ফলে বেশ কয়েকবার বিপর্যয় ব্যতিরেকে হাওড় এলাকায় বোরো ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছে। হাওর এলাকাকে আগাম বন্যামুক্ত রেখে বোরো ফসল রক্ষা করা হয়। বিগত অর্থ-বছরসমূহে সুনামগঞ্জ জেলায় নদী ড্রেজিং করার ফলে হাওর এলাকায়প্রাক-মৌসুম আগাম আকষ্মিক বন্যার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন