অল্প দিনে নগরবাসীকে যা দিয়ে গেলেন আনিসুল

রাজধানী ঢাকা নিয়ে যে অভিযোগটা সবচেয়ে বেশি শোনা যেতো, তা হলো ফুটপাত দখল আর যত্রযত্র অবৈধ স্থাপনা। তবে গত দুই বছরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। বেশিরভাগ ফুটপাত দখলমুক্ত হয়েছে। রাস্তাগুলি সম্প্রসারিত হয়েছে। নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। অবৈধ দখলে থাকা শত শত একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে।

যার ছোঁয়ায় বদলে গেছে ঢাকার দৃশ্য, যার ছোঁয়ায় স্বপ্ন দেখছে ঢাকাবাসী সেই আনিসুল হক আজ নেই। ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্র দুই বছরে ঢাকার চিত্র বদলে ফেলেন আনিসুল হক। তবে স্বপ্নের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করার আগেই বিধাতার অমোঘ নিয়মে চলে যেতে হয়েছে তাকে। চলে যাওয়ার আগে ঢাকাবাসীর জন্য তৈরি করে গেছেন স্বপ্নের পথ। দেখিয়েছেন, স্বপ্নকে কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হয়। স্বল্প সময়ে মেয়র আনিস ঢাকাবাসীকে যা দিয়ে গেছেন তা হলো-

দীর্ঘদিন ধরে বেদখলে থাকা তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল উদ্ধার ছিল মেয়র আনিসুল হকের সবচেয়ে সাহসী উদ্যোগ। ট্রাক টার্মিনালে উদ্ধারে মেয়র আনিসুল হককে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। এমনকি সরকারি দলের অনেক নেতাকর্মীও ট্রাক টার্মিনালটি সরিয়ে না নিতে মেয়র আনিসুল হকের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। তবে সরকারি দলের তোয়াক্কা না করে এবং প্রভাবশালীদের প্রবল আপত্তি উপেক্ষা করে দখলমুক্ত করেছেন টার্মিনালটিকে। পরে সড়কটি দখলমুক্ত করে সাতরাস্তা থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কে বিভাজক তৈরি করে দেওয়া হয়। এছাড়া সড়কের দুপাশে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করে উত্তর সিটি করপোরেশন। বর্তমানে তেজগাঁওয়ের সেই রাস্তায় যানজট অনেকটাই কমেছে বলে মনে করছে নগরবাসী।

এদিকে বিমানবন্দর সড়কে যানজট কমাতে মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ করার উদ্যোগ নেন আনিসুল হক। এরইমধ্যে মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

‘সমস্যা চিহ্নিত, এবার সমাধান যাত্রা’ স্লোগানে মাঠে নামা আনিসুল হক একের পর এক দখলমুক্ত করতে থাকেন রাজধানীর বেদখল হয়ে যাওয়া জমিগুলি। বিশেষ করে তার নির্দেশে বনানীর ২৭ নম্বরে যুদ্ধাপরাধী মোনায়েম খানের অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধারে পদক্ষেপ নেন মেয়র আনিসুল হক। এরআগে কোন প্রশাসন বাড়িটির অবৈধ জায়গা দখলমুক্তকরণে কোনো উদ্যোগ নেননি। মোনায়েম খানের বাড়ি ‘বাগ এ মোনয়েম’এর অবৈধ অংশ দখলমুক্ত করে রাস্তার সম্প্রসারণ করা হয়।

এদিকে কূটনৈতিকপাড়া বারিধারা ও গুলশানের বিভিন্ন দূতাবাসের দখলে থাকা ফুটপাতও দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেন মেয়র। এর আগে কোন প্রশাসন কূটনীতিকদের দখলে থাকা অবৈধ জমি উদ্ধারে কোন পদক্ষেপতো নেই-ই বরং টুঁ শব্দটিও করেননি। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়া হাই কমিশনসহ আটটি দূতাবাসকে ফুটপাত থেকে নিরাপত্তামূলক কংক্রিট প্লান্টার ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা সরাতে চিঠি পাঠায় নগর কর্তৃপক্ষ। তবে অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের দূতাবাস তা সরাতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে নিজে উপস্থিত থেকে কূটনীতিকদের তোয়াক্কা না করে তিনি অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধার করেন।

যানজট নিরসনে ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে গাবতলীর রাস্তা পার্কিংমুক্ত রাখার ঘোষণা দেন মেয়র। পরে ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে টেকনিক্যাল মোড়ের বাস স্টপেজ থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত রাস্তা অবৈধ পার্কিংমুক্ত করা হয়। এদিকে আমিনবাজারে দীর্ঘদিন বেদখল থাকা সিটি করপোরেশনের ৫২ একর জমি উদ্ধারেও অভিযান চালান মেয়র। এছাড়া ঢাকার খালগুলো উদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন আনিসুল হক।

এদিকে নগরের সৌন্দর্যবর্ধনে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে প্রায় ২০ হাজার অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেন মেয়র আনিসুল হক। শুধু তাই নয় গ্রীন ঢাকা গড়তে মানুষকে আহ্বান জানান গাছ লাগানোর। নিজে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় বৃক্ষরোপণ করে, সবুজ নগরী গড়তে নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন।

গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ওই এলাকার গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে সে বছরের ১০ অগাস্ট থেকে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় চালু হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সেবা ‘ঢাকা চাকা’। সেদিনই চালু করা হয় বিশেষ রঙের রিকশা । এছাড়া নগরীর পুরোনো ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলার আহ্বান জানিয়ে মেয়র আনিসুল হক বলেছিলেন, যেই ভবনগুলো জরাজীর্ণ সেগুলো ভেঙ্গে ফেলতে হবে। যেগুলো রঙ করা হয়নি, তা শিগগিরই রং করতে হবে।

হয়তো ভবনগুলো রং করা হবে একদিন । সৌন্দর্যের শহরে পরিণত হবে ঢাকা। তবে সেই দিনটি দেখে যেতে পারলেন না গ্রীন ঢাকার স্বপ্নদ্রষ্টা মেয়র আনিসুল হক।