আজও বিক্ষোভে উত্তাল ভিকারুননিসা, বিচার দাবি

শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীকে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ দিয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে বাধ্য করার প্রতিবাদে আবারও সড়কে নেমেছে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেয়েরা। বুধবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে সহপাঠীর আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে বেইলি রোড শাখার গেটের বাইরে বসে পড়েছে তারা।

ভিকারুননিসা ক্যাম্পাস ও বাইরের সড়কে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’ (ন্যায় বিচার চাই) স্লোগান দিচ্ছে তারা। এছাড়া নানা ধরনের প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড তৈরি করে তা ধরে রেখেছে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা আজকের (বুধবার) পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো সে বিষয়ে কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দুপুর সাড়ে ১২টায় পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।

মাশনুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, দোষীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা নিয়মিত রাস্তায় নামব। আর কেউ যেন এমন মৃত্যুর শিকার না হয় সেটি নিশ্চিত করতেই আমাদের এ উদ্যোগ।

এর আগে গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী’ হিসেবে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রির বাবা। মামলার আসামিরা হলেন- অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনা।

এছাড়া ওই ঘটনায় ভিকারুননিসার শিক্ষক আতাউর রহমান, খুরশিদ জাহান এবং গভর্নিং বডির সদস্য ফেরদৌসী বেগমকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে মাউশির (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর) ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক অধ্যাপক মো. ইউসুফকে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উভয় কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক প্রীতিশ কুমার সরকারকে নিয়ে এক সদস্য বিশিষ্ট পৃথক একটি কমিটি গঠন করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে অরিত্রি চৌধুরী কেন আত্মহত্যা করেছে এর কারণ খুঁজতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কমিটিতে একজন অতিরিক্ত শিক্ষা সচিব, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী এবং বিচারক থাকবেন। তারা অরিত্রি আত্মহত্যার ঘটনা এবং সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ রকম ঘটনা তদন্ত করে কারা দায়ী এগুলো খুঁজে বের করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেবেন।

অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তারা বাবা দিলীপ অধিকারী সাংবাদিকদের বলেন, অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গত রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের সামনে আমাকে অনেক অপমান করে। এ অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি।