তৃতীয় হয়েই শেষ ‘কালো ঘোড়াদের’ বিশ্বকাপ যাত্রা

ম্যাচ শেষে বেলজিয়ামের উদযাপন হতে পারতো বাঁধন ছাড়া। বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের সেরা সাফল্য বলে কথা। কিন্তু সেই উদযাপনে আবেগ বাঁধ ভাঙলো না কখনোই। ইংল্যান্ডও যে পরাজয়ের বেদনায় মুচড়ে পড়লো, তাও নয়। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ যে বিশ্বকাপের সবচেয়ে ‘নিষ্ঠুর’ ম্যাচ। ফাইনালের মঞ্চে উঠতে না পারা দলের খেলা। যে দল দুটি এখনো সেমি ফাইনালে হারের বেদনাই ভুলতে পারেনি। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান নির্ধারণী বলে মর্যাদার বিষয় তো কিছু থাকেই। সেই মঞ্চে শনিবার সফল বেলজিয়াম। সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে যারা ২-০ গোলে হারালো ইংলিশদের। সোনালী প্রজন্মে ভর করে পেল নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা সাফল্য।

শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হওয়া ম্যাচে মাত্র ৪ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। দারুণ এক সঙ্গবদ্ধ আক্রমণ থেকে গোল করেন ডিফেন্ডার টমাস মুনিয়ের। ৮২ মিনিটে অধিনায়ক ইডেন হ্যাজার্ডের গোলে ২-০ ব্যবধানের জয় নিশ্চিত হয় বেলজিয়ামের।

পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে প্রথম একাদশ সাজানো ইংল্যান্ড যে বেলজিয়ামের সঙ্গে লড়াই জমাতে পারেনি এমন নয়। বরং এক অর্থে- খেলল ইংল্যান্ড আর জিতল বেলজিয়াম। ৫৮ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রাখলো ইংলিশরা। বেলজিয়াম সেখানে অনেক পিছনে। আক্রমণের সংখ্যাতেও ইংলিশরা বেশ এগিয়ে ছিল। কিন্তু পাল্টা আক্রমণে বেলজিয়াম বারবার কাঁপাল ইংলিশ রক্ষণ।

রোমেলু লুকাকুসহ বেলজিয়াম আক্রমণভাগ মিস করলেন অনেক। নইলে আরও বড় ব্যবধানে হারতে পারতো ইংলিশরা। উল্টো পিঠে আবার নিজেদের তৈরি করা দারুণ দারুণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে জয় হ্যারি কেইনদেরই হতো। বেলজিয়াম ডিফেন্স তাই সেখানে বাহবা পেতেই পারে।

ইংল্যান্ড কিছু বুঝে উঠার আগেই এদিন গোল আদায় করে নেয় বেলজিয়াম। নাসের চাডলির বাড়ানো বলে গোল করেছেন মুনিয়ের। তবে বেলজিয়ামের আক্রমণটি ছিল সম্মিলিত। যে আক্রমণে অবদান ডি ব্রুইন, লুকাকু ও হেজার্ডেরও। মুনিয়ের বেলজিয়ামের দশম খেলোয়াড় হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপে গোল করলেন। ১৯৮২ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ভিন্ন ১০ জন খেলোয়াড় গোল করার কৃতিত্ব দেখান। ২০০৬ বিশ্বকাপে একই কীর্তি গড়েছিলেন ইতালির খেলোয়াড়রা।

খেলার ৭০ মিনিটে ইংল্যান্ডের প্রায় গোল পেয়েই যাচ্ছিল। এরিক ডায়ারের নেয়া শট অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন বেলজিয়াম ডিফেন্ডার টবি অ্যালডারউইয়ারল্ড। যে গোল পেলে ঘুরে যেতে পারত ম্যাচের চিত্র। ঠিক এমন না হলেও তার আগেও দারুণ সব আক্রমণ রুখেছে বেলজিয়াম রক্ষণ। মোটকথা বেলজিয়াম রক্ষণকে ব্যস্ত রেখেছে ইংলিশ আক্রমণ ভাগ। কিন্তু ৬ গোল করা গোল্ডেন বুটের দাবিদার হ্যারি কেইন পারলেন না নিজের গোল সংখ্যা বাড়াতে। ৪ গোল করা তার প্রতিদ্বন্দ্বী লুকাকুও পারলেন না যাকে দ্বিতীয়ার্ধে তুলেই নেন বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মার্টিনেজ। ৬ গোলে থামলেন কেইন, ৪ গোলে লুকালু।

এরপর ৮৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোল আদায় করে বেলজিয়াম। কেভিন ডি ব্রুইনের অ্যাসিস্ট থেকে গোল করেন হ্যাজার্ড। তাতে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। দারুণ এক পাল্টা আক্রমণ থেকেই পরাস্ত হয়েছেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড।

বিশ্বকাপ ইতিহাসে এনিয়ে দ্বিতীয়বার চতুর্থ হওয়ার স্বাদ পেল ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ সালের শিরোপাধারীরা ১৯৯০ বিশ্বকাপও শেষ করেছিল চতুর্থ হয়ে। ২৮ বছর পর সেমি ফাইনালে উঠে চতুর্থ হয়ে সন্তুষ্ট থাকলে হলো গ্যারেথ সাউথগেটকে। আর বিশ্বকাপের ‘কালো ঘোড়া’ বেলজিয়াম থামলো তৃতীয় হয়ে।