পোলার্ড ঝড়, শেষ ওভারের রোমাঞ্চ আর সব সম্ভবের দিন

কিছু বুঝে ওঠার আগেই টি-টুয়েন্টির ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। সেটা ঘুরিয়ে দিতে কাউকে না কাউকে দারুণকিছু করে দেখাতে হয়। মঙ্গলবার ঢাকা-খুলনা ম্যাচে রোমাঞ্চ ছড়ানোর মঞ্চ প্রস্তুত করতে তেমন দুটি ইনিংস উপহার দিলেন দুজন। প্রথমজন ব্র্যাথওয়েট, পরেরজন তারই স্বদেশি পোলার্ড। তবে ম্যাচ শেষে দ্বিতীয়জনের নামটাই বেশি করে আলোচনায়, আর প্রথমজন ট্র্যাজিক হিরো! ব্র্যাথওয়েটের করা শেষ ওভারে দরকারি ৬ রান তুলেই যে ক্ষণেক্ষণে রং বদলাতে থাকা ম্যাচটা ৪ উইকেটে পকেটে পুরেছে ঢাকা ডায়নামাইটস।

হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করার পর খুলনা টাইটান্সকে হারিয়েই ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু ঢাকার। পরে টানা দুই জয়ে নিজেদের শক্তি জানান দিয়েছে দলটি। ফিরতি দেখায় রোমাঞ্চ উপহার দিয়ে আবারও হাসি সাকিবের দলের। ব্যাটিংয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সঞ্জীবনী কাজে লাগিয়ে অবশ্য বোলিংয়ে উড়ন্ত শুরুই করেছিলেন মাহমুদউল্লাহরা, পোলার্ডের সব সম্ভবের ৫৫ রানের ইনিংসের কাছে শেষপর্যন্ত হারতে হল টাইটান্সদের।

শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটে এসে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের অপরাজিত ৬৪ রানে নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেটে ১৫৬ রান তোলে খুলনা টাইটান্স। জবাবে শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জটা নিতে পারেনি ঢাকা ডায়নামাইটস। দলীয় ফিফটির আগেই প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের টেনে তোলেন কাইরন পোলার্ড।

আইপিএলের গত মৌসুমে সুনিল নারিনকে ওপেনিংয়ে পাঠিয়ে চমক দেখিয়েছিল কেকেআর। ঢাকাও চেষ্টাটা করল, কিন্তু নারিন পারেননি। উল্টো ১৬ বলে ৭ রান তুলে টি-টুয়েন্টির সঙ্গে বেমানান এক ইনিংস খেলে ফিরেছেন। আরেক উদ্বোধনী এভিন লুইসের অবদান ৪।

সেখান থেকে গত ম্যাচের সেরা শহিদ আফ্রিদি (১) ও ক্যামেরুন ডেলপোর্টকে (২) দ্রুত হারিয়ে বিপদে পড়ে ডায়নামাইটসরা। অধিনায়ক সাকিবের ৩ চারে ১২ বলে ২০ রানের ইনিংসটি বড় না হলে আরেকবার ধাক্কা খায় ঢাকা।

ধুঁকতে থাকা সেই ঢাকার ইনিংসে প্রাণ ফেরান পোলার্ড। ১৯ বলে ফিফটি তুলে বিপিএলের তৃতীয় দ্রুততম অর্ধশতকের রেকর্ড ছোঁয়ার দিনে বল বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে ফেলেছেন ৬ বার। সেই ছয় ছক্কার ৪টিই আবার মাহমুদউল্লাহর এক ওভারে। শুরুর বলে সিঙ্গেল দিয়ে ওই ওভারের ২৫ রান ঢেলেছেন খুলনার অধিনায়ক।

ম্যাচটা যখনই ঢাকার দিকে হেলে গেছে বলে মনে হচ্ছিল, তখন পোলার্ডকে সাজঘরে পাঠিয়ে নাটকীয়তা আনেন শফিউল। ক্যারিবীয় তারকা ৩ চার ও ৬ ছয়ে ২৪ বলে ৫৫ রানে ফিরেছেন।

বাকি কাজটুকু সারেন পোলার্ডের ৭৩ রানের জুটিসঙ্গী জহুরুল ইসলাম। শেষ অবধি ৩৯ বলে ৪৫ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়েই ফিরেছেন। শেষ ওভারে ৬ রান দরকার ছিল ঢাকার। একসময় সেটি ২ লে ৪ রানে নেমে আসে। জহুরুল ওভারের পঞ্চম বলটি বাইন্ডারি হাঁকিয়ে সব উত্তেজনার ইতি টানে। শেষ হাসির পথে সঙ্গী পান ১২ রানে অপরাজিত থাকা মোসাদ্দেক। সময়ের প্রয়োজনে তার ছোট ইনিংসটিও মহামূল্যবান।

আগে সাকিব, আফ্রিদি, নারিন- তিন স্পিনত্রয়ীর চাপে শুরুতে বিপাকে পড়েছিল খুলনাও। শেষদিকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। আরেক ক্যারিবীয় কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের অপরাজিত ৬৪ রানে পায় চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ।

মঙ্গলবার শান্ত ও মিচেল ক্লিনজারের সাবধানী উদ্বোধনীতে ধীরগতির শুরু পায় খুলনা। ১৪ বলে ১০ করা ক্লিনজারকে আবু হায়দারের ক্যাচ বানিয়ে সেটার সমাপ্তি টানেন সাকিব। ২৫ বলে ২৪ করা শান্তকে সাজঘরে পাঠিয়ে বাকি কাজটা সারেন সুনিল নারিন। মাঝে ধুঁকতে থাকা ধীমান ঘোষকে (৯ বলে ২ রান) মুক্তি দেন আবু হায়দার।

অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও (১০ বলে ১৪) বেশিক্ষণ টেকেননি। সেখান থেকেই প্রতিরোধ আসে রুশো ও ব্র্যাথওয়েটের ব্যাটে। দুজনে দ্রুতগতিতে ৫৩ রান যোগ করেন। রুশো খানিকটা সাবধানেই ব্যাট চালিয়েছেন। আবু হায়দারের বলে মোসাদ্দেকের হাতে ধরা পড়ার আগে ৩ চারে ৩০ বলে ৩৪ রানের অবদান তার।

ব্র্যাথওয়েট শেষ অবধি ছিলেন, ২৯ বলে ৬৪ রানের ঝড়ো ইনিংস সাজিয়েছে। যাতে ৪টি চারে সঙ্গে থাকল ৬টি বিশাল আকারের ছক্কার মার। তাতেই দেড়শ পেরিয়ে যায় টাইটান্সরা।

ঢাকার সেরা আবু হায়দার, তবে ২ উইকেট নিতে ৪ ওভারে ৪০ রান খরচ করতে হয়েছে এই পেসারকে। সাকিবও খরুচে, ৩ ওভারে ৩২ রানে এক উইকেট। পরপর দুই বলে ছয় হজম করা আফ্রিদি ৪ ওভারে ২৩ রান ও নারিন ২২ রান দিয়ে একটি করে উইকেট নিয়ে সেখানে নামের প্রতি সুবিচারই করেছেন।