হাসপাতালে শুয়ে রক্ত দিয়ে প্রেমিকাকে বিয়ে!

প্রেমিকার পরিবারের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছেন প্রেমিক। যেতে হয়েছে হাসপাতালে। খবর শুনেই প্রেমিকা ছুটলেন হাসপাতালে। আহত প্রেমিক যেন প্রাণ ফিরে পেলেন। প্রেমিকার পণ তিনি প্রেমিক ছেড়ে কোথাও যাবেন না।

ব্যস! আহত প্রেমিক হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই ব্লেড দিয়ে আঙুল কেটে রক্ত বের করেন। রাঙিয়ে দেন প্রেমিকের সিঁথি!

সিনেমার কোনো কাহিনী নয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গেই ওই ঘটনা ঘটেছে। উত্তর চব্বিশ পরগণার বনগাঁ এলাকায় গতকাল সোমবার রাতে ওই ঘটনা ঘটে।

প্রেমিকের নাম বলরাম নাগ (২১) ও প্রেমিকার নাম শিউলি বিশ্বাস (২০)। উভয়ই বনগাঁর শক্তিগড় এলাকার বাসিন্দা এবং বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বনগাঁ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আহত বলরাম তাঁর প্রেমিকা শিউলির সিঁথিতে নিজের রক্ত দিয়ে রাঙিয়ে দেন। প্রেমের এ দৃশ্য উপভোগ করেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও রোগীরা।

পরে অবশ্য ওই প্রেমিকযুগলের বিয়ে হয়। শিউলিকে ঘরেও তুলে নিয়েছে বলরামের পরিবার। থানায় অভিযোগ করা হয়েছে শিউলির পরিবারের বিরুদ্ধে।

গত কয়েক বছর ধরেই বলরাম ও শিউলির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক। কিন্ত এই ভালোবাসায় প্রথম থেকেই বাধ সাধে শিউলির পরিবার। শিউলির পরিবার কখনই বলরামের সঙ্গে তাঁকে মেনে নিতে পারেনি। যা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে অশান্তিও হয়। এমনকি স্থানীয় বাসিন্দাদের চেষ্টায় দুই পরিবারের মধ্যে একটা মধ্যস্থতা করার চেষ্টাও করা হয়। কিন্ত কিছুতেই কোনো ফল মেলেনি।

শিউলির বাবা প্রদীপ বিশ্বাস একজন শিক্ষক। জানা যায়, গত সোমবার বলরামকে বাড়িতে ডেকে নেন প্রদীপ। এরপর তিনি সোজাসাপ্টা ভাষায় জানিয়ে দেন, তিনি যেন শিউলির জীবন থেকে দূরে সরে যান। কিন্ত শিউলির বাবার ওই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বলরাম সাফ জানিয়ে দেন, এটা তিনি কখনোই করতে পারবে না। কারণ তিনি শিউলিকে ভালোবাসেন। এই কথা বলার পরেই শিউলির বাবা ও তাঁর পরিবারের লোকজন বলরামকে বেধড়ক মারধর করে। বলরাম মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। পরে মারধরের খবর পেয়েই বলরামের পরিবার সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় বলরামকে উদ্ধার করে সোজা বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই ভর্তি করা হয় বলরামকে। পাশাপাশি শিউলির বাবা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বনগাঁ থানাতেও অভিযোগ দায়ের করে বলরামের পরিবার।

এদিকে, মারধর করার সময় বাড়িতে ছিলেন না শিউলি। পরে বাড়িতে এসে ঘটনা জানতে পেরেই সোজা চলে যান বনগাঁ হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে নিজের বাবা ও তাঁর পরিবারের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। শিউলি আহত বলরামকে জানিয়ে দেন এখনই তিনি বলরামকে বিয়ে করতে চান। সঙ্গে সঙ্গে আহত বলরাম হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই শিউলিকে বুকে টেনে নেয়। পরে ব্লেড দিয়ে নিজের আঙুল কেটে রক্ত দিয়ে শিউলির সিঁথি রাঙিয়ে দেয়। সোমবার রাতেই হাসপাতালের রোগী, নার্স ও চিকিৎসকদের সাক্ষী রেখে আইনগতভাবে শিউলিকে বিয়েও করে বলরাম। এরপর আজ মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল থেকে বন্ডে সই করে নিজের স্ত্রী শিউলিকে নিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন বলরাম।

এদিন, বলরামের পরিবারের উদ্যোগে বাড়িতে ছোট খাটো করে বিয়ের একটি অনুষ্ঠানও করা হয়। বলরামের মা মিনতি নাগ বলেন, ‘ছেলে ও ছেলের বউকে ঘরে তুলে নিয়েছি।’