আফগানিস্তান থেকে ভারত হয়ে দেশে ঢুকছে আফিম!

রাজধানীর পুরানা পল্টন লেন ও বনশ্রী থেকে তিন কেজি আফিমসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। মো. আবুল মোতালেব (৪৬) জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়াকে (88) ক্রেতার ছদ্মবেশ ধারণ করে গ্রেপ্তার করেন ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুল কবীর।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মোতালেব ও জাহাঙ্গীর ভিন্ন ভিন্ন পেশার আড়ালে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। জব্দ করা এই মাদকের চালান পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে। আর বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাদকের হাব হচ্ছে আফগানিস্তান। সেখান থেকে আফিমের চালান ঢাকায় আনে ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে। উদ্ধার করা আফিমের চালানটি ফেনী থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জব্দ করা আফিম ঢাকায় সরবরাহের চেষ্টা করে। ১০-১২ বছর পরে এটি ছিলো প্রথম চালান।

শনিবার রাজধানীর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ে (উত্তর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল।

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন আগে আমাদের কাছে একটি তথ্য আসে, একটি চক্র আফিমের বড় চালান ঢাকায় এনে বাজারজাত করার চেষ্টা করছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করি ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করতে থাকি।

ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ও সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুল কবীরের টিম রাজধানীর পল্টন মডেল থানার পুরানা পল্টন লেন (ভিআইপি রোড) থেকে দুই কেজি আফিমসহ মো. আবুল মোতালেব (৪৬) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বনশ্রী আবাসিক এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়া (88) নামে আরেকজনকে এক কেজি আফিমসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

কীভাবে আফিমের চালান জব্দ ও এটি আদৌ আফিম কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, একটি শপিং ব্যাগের ভেতরে প্লাস্টিকের বয়ামের মধ্যে পলিথিনে মোড়ানো ছিল দুই কেজি আফিম। অপর এক কেজি আফিম পলিথিনে মোড়ানো ছিল।

তিনি বলেন, আফিম একটি ‘ক’ শ্রেণির মাদক। উদ্ধার করা তিন কেজি আফিমের আনুমানিক বাজারমূল্য পৌনে ৩ কোটি টাকা।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মাদক নিয়ন্ত্রণের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা জানতে পারি, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে এ চালান বাংলাদেশে এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাদকের কেন্দ্র হচ্ছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তান থেকেই এ আফিমের সরবরাহ। এ আফিমের চালান ঢাকায় আনা হয় ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে। উদ্ধার করা আফিমের চালানটি ফেনী থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। আটক ব্যক্তিরা জব্দ করা আফিম ঢাকায় সরবরাহের চেষ্টা করে আসছিল।

গ্রেপ্তারদের সম্পর্কে মাদকের অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, গ্রেপ্তার মোতালেব নোয়াখালীর বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসায় জড়িত। তবে এর আড়ালে মাদক ব্যবসা করতেন। জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়ার বাড়ি জামালপুরে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে একটি বেসরকারি গ্রুপ অব কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। এর আড়ালে তারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।

মাদকের ব্যবহার সম্পর্কে জাফরুল্লাহ বলেন, আমাদের দেশে আফিমের ব্যবহার দুইভাবে হয়ে থাকে। এক আফিম সরাসরি সেবন এবং এ আফিম দিয়ে কেমিক্যালের সাহায্যে পরবর্তীতে হেরোইন, ইয়াবা এবং ফেনসিডিলের মতো ভয়ংকর ড্রাগগুলো তৈরি হয়। আফিম আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানে চাষাবাদ হয়ে থাকে। এরসঙ্গে আরও দুজনের নাম আমরা পেয়েছি। যা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে আফিমের উৎস এবং গন্তব্য কোথায় ছিল সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা যাবে বলেও জানান মাদক নিয়ন্ত্রণের এই কর্মকর্তা।