ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে কুমিল্লার কচু-লতি

কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলা থেকে কচু আর কচুর লতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে। দিন দিন বিদেশে কদর বেড়েই চলেছে এই কচু আর লতির। স্থানীয় কৃষি বিভাগও কচুর উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে নানান ধরনের কাজ করে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন- ইতোমধ্যে বিদেশে বিখ্যাত হয়ে পড়েছে বরুড়ার কচু ও লতি। তবে স্থানীয় পর্যায়ে থেকে সরাসরি রপ্তানি না হওয়াতে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। অনেক মধ্যসত্বভোগী না থেকে স্থানীয় কৃষকদের থেকে সরাসরি কচুরর লতি সংগ্রহ করলে কৃষকদের লাভ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।

বরুড়ায় উৎপাদিত পানি কচু ও লতি বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে, দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সকল দেশে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের প্রায় সব দেশেই যাচ্ছে এই লতি ও কচু। আগে এই লতি ও কচু প্রবাসীদের মাধ্যমে গেলেও গত বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাজেন্সির মাধ্যমে ব্যাপকহারে রপ্তানি হচ্ছে। চিটাগং ফ্রেশ ফ্রুটস এন্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার এসোসিয়েশনের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে এ সবজি দু’টি। তবে রপ্তানিকারকরা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে এসব কিনছেন না। আগে কৃষকরা স্থানীয় কয়েকটি বাজারে সাপ্তাহিক হাটের দিন কচু ও লতি নিয়ে যেতেন। এরপর ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে এগুলো কিনে নিয়ে যেতেন। তবে এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের খুব একটা বাজারে যেতে হয় না। স্থানীয় ক্ষুদ্র পাইকাররা প্রতিদিনই কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কচু ও লতি সংগ্রহ করছেন। বাড়িতে নারীরা এসব লতি ও কচু পরিস্কার করে আটি বাঁধেন। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কৃষকদের বাইরে এ কাজে প্রায় দেড় হাজার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।

চিটাগং ফ্রেশ ফ্রুটস এন্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার এসোসিয়েশনের সহসভাপতি ইসমাইল চৌধুরী হানিফ বলেন, বিদেশিদের পছন্দ সবুজ লতি ও কচু। এজন্য বরুড়ার এই দু’টি পণ্যই এখন বিখ্যাত। এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বরুড়ার কচু ও লতি সুস্বাদু। আমরা পানি কচু আর লতি রপ্তানি করছি। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে যাচ্ছে দুবাই। আর ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ ২৫টির বেশি দেশে। রপ্তানিতে আমাদের একমাত্র সমস্যা হচ্ছে সড়কে চাঁদাবাজি। বরুড়া থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম পণ্য আনতে পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। এতে ক্রেতা পর্যায়ে দাম অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া আর তেমন কোন সমস্যা নেই।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের উপ-পরিচালক শৈবাল কান্তি দাস জানান, বছরে ২০০টন কচুর লতি এ বন্দর দিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

২০১৫ সালে বরুড়ায় উৎপাদিত কচু ও লতি রপ্তানি করেছেন ৯৩০ টন। এর মধ্যে পানি কচু ৪৮০ টন এবং লতি ৪৫০ টন। ২০১৬ সালে মোট রপ্তানি হয়েছে ৯৪৫ টন। এর মধ্যে পানি কচু ৪৭০ টন এবং লতি ৪৭৫ টন। ২০১৭ সালে মোট রপ্তানি হয়েছে ৯৩৫ টন। এর মধ্যে পানি কচু ৪৬৫ টন এবং লতি ৪৭০ টন। ২০১৮ সালে মোট রপ্তানি হয়েছে ৯৪৫ টন। এর মধ্যে পানি কচু ৪৭০ টন এবং লতি ৪৭৫ টন। ২০১৯ সালে মোট রপ্তানি হয়েছে ৯৬৫ টন। এর মধ্যে পানি কচু ৪৮৫ টন এবং লতি ৪৮০ টন এবং সর্বশেষ ২০২০ সালে মোট রপ্তানি হয়েছে ৯৭৫ টন। এর মধ্যে পানি কচু ৪৯০ টন এবং লতি ৪৮৫ টন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারের ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্পে বরুড়া উপজেলা রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বিষমুক্ত উপায়ে কচুসহ সবজি উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রদর্শনী করা হচ্ছে। এখন কৃষির আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের সংখ্যাটা ব্যাপকহারে বাড়লে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের আনা হবে। তারা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হবে। আশা করছি ২০২২ সালের শুরুর মধ্যেই রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কৃষকদের সরাসরি সম্পর্ক করিয়ে দিতে পারবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিসুল ইসলাম বলেন, বরুড়ার কচু ও লতির পরিচিতি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা আমাদের জন্য গৌরবের। পাশাপাশি কৃষি বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে এর উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য। আমরাও এই বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখবো। যেন কৃষকরা সরাসরি রপ্তানিকারকদের কাছে তাদের কচু বিক্রি করতে পারেন।