কক্সবাজারে আট মাস ধরে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের অজুহাতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ‘সাময়িকভাবে’ বন্ধ করে দেয়া হয় কক্সবাজার জেলার জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম। কিন্তু সাময়িক বন্ধের আট মাস পার হলেও এখনো তা চালু হয়নি। কবে চালু হবে, তাও জানে না প্রশাসন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলাবাসী।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে টেকনাফ-উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হয়। এ পর্যন্ত আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পরিচয়ে জন্মসনদ তুলে নানা কাজে লাগাতে পারে- এই সন্দেহে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শাখার রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) জ্যোতির্ময় বর্মণ এক স্মারকমূলে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত জন্মসনদ প্রদান বন্ধ রাখতে নির্দেশনা জারি করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সেই নির্দেশনা জেলার আটটি উপজেলার ৭১টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার মেয়র বরাবরে পাঠানো হয়। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় সার্ভারে কক্সবাজার জেলার প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়।

বহিরাগমন বিভাগ ও পাসপোর্ট অধিদফতরের উপপরিচালক (উখিয়া-টেকনাফের দায়িত্বে থাকা) আবু মোহাম্মদ নোমান জাকির হোসেন বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ১১ লাখ ১১ হাজার ৬২৭।

কক্সবাজারের চারটি পৌরসভা এবং ৭১টি ইউনিয়নে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। কিছু জনপ্রতিনিধি ভোগান্তি রোধে বিকল্প প্রত্যয়নপত্র দিলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না। কক্সবাজার পৌরসভার পাহাড়তলী এলাকার নুরুচ্ছফা বলেন, সম্প্রতি তিনি চিকিৎসা ভিসা আবেদনের জন্য চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের কার্যালয়ে যান। তারা অন্যসব কাগজপত্র গ্রহণ করলেও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেনি। শেষ পর্যন্ত জন্মনিবন্ধন দিতে না পারায় তার ভিসা হয়নি।

ঈদগড় ইউনিয়নের রাজঘাট এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, ‘সরকার আকস্মিকভাবে এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন ছাড়া কিছুই মিলছে না।’

সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার ইসমত আরা বলেন, জন্মনিবন্ধন না দেওয়ায় অনেকের বিয়ে আটকে আছে। কারণ কাজী অফিসে জন্মনিবন্ধন ছাড়া বিয়ে হচ্ছে না। অনেক অভিভাবক সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে বিপাকে পড়েছেন। জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ঘাটে ঘাটে আটকে যাচ্ছে মানুষ। তার প্রশ্ন, রোহিঙ্গাদের জন্য কেন আমাদের এত দুর্ভোগ পোহাতে হবে!

কক্সবাজার সুজনের সভাপতি প্রফেসর এমএ বারী বলেন, রোহিঙ্গা নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। কিন্তু তারপরও সার্ভার সচল করা হচ্ছে না। জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, জন্মসনদ এখন প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। আমরা যদি সতর্ক হই, তাহলে রোহিঙ্গারা কীভাবে জন্মসনদ পাবে? রোহিঙ্গাদের কারণে জন্মনিবন্ধন সনদপত্র দেওয়া বন্ধ না করে বরং জনপ্রতিনিধিরা সচেতন হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।

রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জনগণের যে কী পরিমাণ দুর্ভোগ হচ্ছে, সেটা দূর থেকে উপলব্ধি করার সুযোগ নেই। সাধারণ মানুষ বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত তাদেরকে (জনপ্রতিনিধি) গালিগালাজ করে। কিন্তু তাদের কিছুই করার নেই। জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম দ্রুত চালূ করার দাবি জানান তিনি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে ওপর মহলে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম চালু করার চেষ্টা চলছে।