কলারোয়ার ওসি শেখ মুনীর কক্সবাজারে বদলি

কক্সবাজারে বদলি হয়েছেন কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলহাজ শেখ মুনীর-উল-গীয়াস।
সোমবার রাতে বিষয়টি তিঁনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) তার এই বদলির আদেশ হয়েছে বলে জানান।
কলারোয়া থানা থেকে তাঁকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের কক্সবাজারে বদলি হয়েছেন।

এদিকে, একই দিন কক্সবাজার জেলা পুলিশের শীর্ষ ৭ কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। এদের মধ্যে জেলা পুলিশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেনও আছেন। এছাড়া আরও দুইজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও চারজন সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাও বদলি তালিকায় আছেন। এদের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশ ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার সর্বোচ্চ কর্মকর্তাও রয়েছেন।

সোমবার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

তবে একযোগে কক্সবাজার জেলা পুলিশের শীর্ষ এই সাত কর্মকর্তাকে কেন বদলি করা হয়েছে—তা পুলিশের কোনো সূত্রই নিশ্চিত করতে পারেনি।

ধারণা করা হচ্ছে, মেরিন ড্রাইভে সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান খুন হওয়ার পর জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসাবে ওই সাত কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়ে থাকতে পারে।

এদিকে, মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) দায়িত্ব হস্তান্তরের পর সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মুনীর-উল-গীয়াস কলারোয়া ত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। যশোরে পরিবারের সাথে একদিন অবস্থানের পর ঢাকায় আইজি দপ্তরে রিপোর্ট, ব্রিফিং এ অংশ নেয়ার কথা। পরে যোগ দেবেন কক্সবাজারে।

ওসির বদলির ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও প্রকাশ্যে অনেকেই আক্ষেপ করেছেন। ওসির বদলির আদেশের প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।

ওসি শেখ মুনীর-উল-গীয়াসের বদলি
কাঁদালেন কলারোয়াবাসিকে, কাঁদলেন তিনিও।

গেলো বছরের ২৮মে কলারোয়া থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন তিঁনি। প্রায় দেড় বছরের এই সময়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন যশোরের ছেলে শেখ মুনীর।

তাঁর বদলির খবরে অনেককে কাঁদতে দেখা গেছে।
শেষকথায় তিঁনি যে ভালো মানুষ ও ভালো পুলিশ অফিসার ছিলেন সেটা কলারোয়ার সিংহভাগ জনগণের ভাষ্য তথা সর্বজনবিদিত।

বিভিন্ন পেশার অনেকেই জানান- সৎ, নিষ্ঠাবান, সুন্দর আচরণ ও ন্যায়পরায়ন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ইতোমধ্যে কলারোয়ার সাধারণ মানুষের কাছে তিনি পরিচিত পেয়েছিলেন। হয়েছিলেন আস্থাভাজন হিসেবেও। স্মরণকালে কলারোয়ার শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিতে অত্যন্ত নিরপক্ষে ও নির্ভরযোগ্য শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবেও আপামর জনসাধারণের মণিকোঠায় স্থান অর্জন করেছিলেন ওসি শেখ মুনীর। দুষ্টু লোকদের কাছে ইস্পাতকঠিন এই ব্যক্তি নিরপরাধ মানুষের কাছে ছিলেন শেষ আশ্রয়স্থল আর আস্থার কোমলতা।
সরকারি চাকরির রীতি অনুযায়ী বদলি হওয়া স্বাভাবিক। তিঁনি কলারোয়ায় বদলি হয়ে আসার পর কক্সবাজার বদলি হয়ে যাওয়া পর্যন্ত সময়ে কলারোয়ার মানুষকে করে নিয়েছিলেন আপনজন হিসেবে আর কলারোয়াবাসী তাঁকে করেছিলেন নিজেদের পরিবারের একজন হিসেবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- তিনি মাদক, সন্ত্রাস চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছেন। কলারোয়া থানার অবকাঠামো উন্নয়নে সফলতার সাথে কাজ করেছেন। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অনুমতি সাপেক্ষে দীর্ঘদিনের জনাকীর্ণ থানা মসজিদটিও তিনি মডেল মসজিদে পরিণত করেছেন। সম্পূর্ণরূপে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করে মসজিদটি মুসল্লিদের জন্য প্রস্তুত করেছেন।

করোনার এই সময়ে কলারোয়া থানার মানুষকে জনসমাগম কমাতে নানান উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সুন্দর আচরণের মাধ্যমে তিঁনি উপজেলায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।
করোনাকালে যারা চক্ষুলজ্জায় ত্রাণ নিতে আসতে পারেন না, তাদেরকে গোপনে বাসায় ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন তিঁনি।

শেখ মুনীর-উল-গীয়াসের নির্দেশে সত্যিকারের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের খাবার সামগ্রী দেয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করে রাতের আঁধারেও এলাকা চষে বেড়িয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।

বদলির সংবাদ পেয়ে থানায় অবস্থানরত সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বিদায়ী ওসি শেখ মুনীর-উল-গীয়াস বলেন- ‘আমাদের বদলি জনিত চাকরি। ইচ্ছা করলেও থাকার সুযোগ নেই।’

তিঁনি আরো বলেন, ‘আপনারা ন্যায় বিচার থেকে যাতে বঞ্চিত না হন সেই বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রেখে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। কতটুকু দিতে পেরেছি জানি না। তবে সাধারণ মানুষ পুলিশের সেবা থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সেই ব্যাপারে পুলিশ এখন যথেষ্ট সচেতন।’

তিঁনি বলেন, ‘থানায় সেবা নিতে এসে হয়রানী হতে হয়নি কাউকে। সাধারণ মানুষ পেয়েছেন তাদের সঠিক বিচার।’

বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে সকলের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন ওসি মুনীর-উল-গীয়াস। তাই তো প্রিয় ওসির বদলির সংবাদ শুনে বুকের মধ্যের আর্তনাদ প্রকাশ করতে না পারলেও চোখের জল ঠেকাতে পারেনি অনেকেই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন লিখেছেন- ‘আপনার বদলির খবরটা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
কলারোয়াবাসী মুত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আপনাকে ভুলতে পারবো না।’

আরেকজন লিখেছেন- ‘আমার কাছের প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে আপনি একজন। আপনার যোগদানের পর থেকেই কলারোয়াবাসী স্বস্তি পেয়েছেন।’

‘কলারোয়ায় অসহায় মানুষের কাছে আপনি একজন প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ পুলিশ অফিসার’ -বললেন আরো এক ব্যক্তি।

অপর আরেকজন লিখেছেন- ‘কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মনীর উল গীয়াস চিটাগাং রেঞ্জে বদলি হয়েছেন। আজ কথাটা শুনে সত্যি অনেক খারাপ লাগছে। আপনার বদলির খবরটা মানতেই কষ্ট হচ্ছে। আমার দেখা চোখে আপনি কলারোয়া থানার শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ অফিসার। –স্যালুট।’