খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা’র উপর হামলার প্রতিবাদে কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ

পার্বত্য জেলার বান্দরবানের লামা উপজেলায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি মোয়াজ্জেম হোসেন ও পরিচালক কামাল উদ্দিনের মদদে লামার সরই ইউনিয়নের ত্রিপুরা ও ম্রোদের জুমভুমি রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রংধজন ত্রিপুরার ওপর হামালাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তিন সংগঠন।

শুক্রবার(১৫ই জুলাই ২০২২) দুপুর ২টার সময় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশ’ন রাঙামাটি জেলা শাখাসমূহের যৌথ উদ্যোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক থুইনুমং মারমার সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তনুময় চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি রিনিশা চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নবনির্বাচিত রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিমি চাকমা।

বক্তারা বলেন, ভূমি সমস্যা পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি অন্যতম রাজনৈতিক সমস্যা। পাহাড়িদের নিজ ভূমিতে সংখ্যালঘুতে পরিণত করার জন্য রাষ্ট্রীয় মদদে সেটলারদের পাহাড়ে পুনর্বাসন করা হয়। পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য নানা পাঁয়তারা করা হচ্ছে। কখনো পর্যটনের নামে, কখনো সেনা ক্যাম্প স্থাপনের নামে, কখনো সেটলারদের লেলিয়ে দিয়ে, কখনো রাবার বাগানসহ হর্টিকালচারের নামে প্রতিনিয়ত ভুমি বেখদল করা হচ্ছে। আর যারা নিজ পিতৃভুমি রক্ষার জন্য যারা এগিয়ে আসে তাদের ওপর দমন-পীড়ন, হামলা চালানো হয়। লামায় ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা রংধজন ত্রিপুরার উপর হামলা তার একটি দৃষ্টান্ত
তারা আরো বলেন, লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ নামের কোম্পানি লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকম পাড়া, রেংয়ন কার্বারি পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ায় ৪০০একর জুমভূমি জবরদখল করার জন্য গত ২৬এপ্রিল কোম্পানির লেলিয়ে দেওয়া লোকজন আগুন লাগিয়ে দিয়ে ¤্রাে ও ত্রিপুরাদের জুমভূমি, জুম ও বাগান-বাগিচা পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। উক্ত ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সত্তে¡ও সরকার-প্রশাসন রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে তারা এখন আরো বেপরোয়া হয়ে ভূমি রক্ষার আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

বক্তারা অবিলম্বে রংধজন ত্রিপুরার উপর হামলাকারী লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি মোয়াজ্জেম হোসেন ও পরিচালক কামাল উদ্দিনকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজের ইজারা চুক্তি বাতিল করে সেখানকার ত্রিপুরা ও ¤্রােদের জুম ভূমি বেদখল সম্পূর্ণ বন্ধ করার দাবি এবং ভূমি বেদখল বন্ধের দাবি জানান।

রংধজন ত্রিপুরা লামা উপজেলার ৩০৩নং ডলুছড়ি মৌজার লাংকম কার্বারি পাড়া, রেংয়েন কার্বারি পাড়া ও জয়চন্দ্র কার্বারী পাড়ায় ভূমি রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম একজন সংগঠক। তিনি উক্ত মৌজার হেডম্যানের ছোট ভাই। উক্ত হামলার ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত ছাত্র-যুব-নারী সমাজের প্রতিনিধিত্বকার তিন সংগঠন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

গতকাল(বুধবার) রাতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে ভূমি দখলদার লামা ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন।
তারা বলেন, ২০১৯সাল থেকে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের নামে পাহাড়িদের ৪০০একর ভূমি বেদখলের পাঁয়তারা শুরু হয়। এ বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে দুই দফায় ভূমিদস্যুরা পাহাড়িদের ভোগদখলীয় জায়গাগুলোতে জঙ্গল পরিষ্কার করে ও পাহাড়িদের জুমের জমি, জুম, বাগান-বাগিচা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, লেখক, শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষেরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্তেও ভূমিদস্যু রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ কোম্পানী কর্তৃক পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের ঘটনার সত্যতা উঠে এসেছে। ভুক্তভোগী পাহাড়িদের পক্ষ থেকে বান্দরবান জেলা প্রশাসক, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও থানায় অভিযোগ করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে ভূমিদস্যু দুর্বৃত্তরা আজকে রংধজন ত্রিপুরার উপর হামলা করার সুযোগ পেয়েছে। আমরা প্রশাসনের এমন নির্বিকার মৌণতাকে তীব্র নিন্দা জানাই।

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ভূমিদস্যু লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি মোয়াজ্জেম হোসেন, পরিচালক কামালসহ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও হামলার শিকার রংধজন ত্রিপুরার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানান।

উল্লেখ্য বান্দরবানের লামায় ভূমি রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রংধজন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার(১৩ই জুলাই ২০২২) রাত ৮টার সময় লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ক্যজ বাজারে তার ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি মোয়াজ্জেম হোসেন ও পরিচালক কামাল উদ্দিন গং এর লেলিয়ে দেওয়া ৪০-৫০জন রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজের শ্রমিক রংধজন ত্রিপুরার ওপর হামলা চালিয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।