খাগড়াছড়ির পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়োগ কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের স্থানীয় পর্যায় নিয়োগ কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা দেওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এতে করে হাজার হাজার উচ্চ শিক্ষিত তরুন-তরুনীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। প্রায় ২বছর ধরে ঝুলে আছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম।

ঝুলে থাকা নিয়োগের ২’শ ৫৮টি শিক্ষকের শূণ্য পদের পাশাপাশি এরই মধ্যে আরো ১’শ ৫০টি সহকারি শিক্ষকের পদ শূণ্য হয়েছে। এছাড়া পুরো জেলায় প্রধান শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে ১’শ ৩৫টি। এছাড়াও পাজেপ’র হস্তারিত সরকারি অধিদপ্তর/বিভাগের বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে অনেক পদ খালি হয়ে পড়ে আছে। দিন দিন এলাকার শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রকট আকারে ধারন করছে।

এ অবস্থায় সংক্ষুব্ধ হয়ে ২০২১সালের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী খাগড়াছড়ি সদরের আওঅং মারমা, পিতা: সানু মারমা, সাং- পানখাইয়াপাড়া, রোল নং- ১৯৫৯, এনআইডি নং-৬৯০০৮৯০৯৩৭, খাগড়াছড়ি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জনস্বার্থে তাঁর আবেদন পেশ করেন। এতে তিনি চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করা হয়।

তিনি তাঁর আবেদনে উল্লেখ করেন, ২০২২সালের ৩রা ডিসেম্বর এবং ২০২৩সালের ৯ই মার্চ অনুষ্ঠিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি’র সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসকের কোন প্রতিনিধি থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওই সিদ্ধান্তের ১৫(ঝ) নং কলামে উল্লেখ আছে যে, ‘তিন পার্বত্য জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পদে জেলা পরিষদের প্রবিধানের আলোকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

প্রবিধানে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির বিষয়টি না থাকায় নতুন করে বিষয়টি সংশোধন করার প্রয়োজন না’। কিন্তু তারপরও চলতি বছরের ২১শে মার্চ এখতিয়ার বর্হিভূতভাবে নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অর্ন্তভূক্ত করার নির্দেশনা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১নং বিবাদী খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর পত্র প্রেরণ করেন।
যেহেতু বিষয়টি আইনি এবং ১৯৮৯সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৯৮সালে সংশোধিত পার্বত্য এলাকার তিনটি জেলা পরিষদ’র বিদ্যমান প্রবিধান ও ১৯৯৭সালে সম্পাদিত ‘শান্তিচুক্তি’র ধারার সাথে সংগতিপূর্ণ নয় তাই এই বিষয়ে স্থগিতাদেশ কামনা করেন, আদালতে আবেদনকারী আওঅং মারমা।
তাঁর আবেদনটি আমলে নিয়ে বুধবার বিকেলে খাগড়াছড়ি’র যুগ্ম জেলা জজ মাহমুদুল ইসলাম’র আদালত পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ প্রদান করেন। আদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের মে মাসের ৮ই তারিখ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করেন।

খাগড়াছড়ি আদালতের সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট আব্দুল মোমিন জানান, ১৯৯৭সালে সম্পাদিত ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’ এবং ১৯৯৬সালে প্রণীত ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ, খাগড়াছড়ি’র প্রবিধান অনুযায়ী যে কোন ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিষদ চেয়ারম্যানের এখতিয়ার সুস্পষ্ট করা আছে। সেই মতে ২০২১সালের ফেব্রুয়ারিতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বিদ্যমান ২’শ ৫৮টি শূণ্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২২সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি পরিষদে হস্তান্তরিত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারি শিক্ষক নিয়োগ করার লক্ষে যাচাই-বাছাই ও নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়।
২০২২সালের ৮ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় ৩হাজার ৮’শ ৪২জন বৈধ আবেদনকারী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়োগ কার্যক্রমের শেষ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ যাচাই-বাছাই ও নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসক কিংবা তাঁর প্রতিনিধি অর্ন্তভূক্ত করার নির্দেশনা প্রদান করেন।

এ বিষয়ে ২০২২সালের ৩রা আগস্ট খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ’র চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা থেকে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই ও নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অর্ন্তভূক্ত করার বেআইনী শর্ত বাতিল করার অনুরোধ জানানো হয়। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

এ বিষয়ে মামলার ৩নং বিবাদী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ হামিদা বেগম এই প্রতিবেদককে টেলিফোনে জানান, অফিসিয়ালি বিষয়টি এখনো জানি না। আদালতের নোটিশ পেলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জবাব দেয়া হবে।
বাংলাদেশ বেকার কল্যান সংস্থা’র সহ-সভাপতি উদয়ন চাকমা জানান, অনেক কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখা-পড়া শেষ করে ন্যুনতমও যদি সরকারি চাকরি ভাগ্য না মেলে তখন পরিবারের মাঝে হতাশা ভোগার কোন স্বাভাবিক বিষয় নয়। বিশেষ করে বিসিএস’র কোটা প্রথা তুলে দেওয়াটাও দুঃখ জনক।

এইভাবে স্থানীয় পর্যায় পার্বত্য জেলা পরিষদ’র অধীন যতগুলো নিয়োগ হয়েছে সবখানে ২০/২৫লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ করা হয়েছে। এককথায় প্রচন্ড দুনীর্তি গ্রস্থ জ্বালা পরিষদ নামে আখ্যায়িত।