খাগড়াছড়ির রামগড়ে স্থলবন্দরের ১৭একর ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড়ে স্থল বন্দর নির্মাণকে কেন্দ্র করে সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পে ১৭একর ভূমি অধিগ্রহণে ভূমি দুস্যদের তৎপরতা চলছে। রামগড় বাজার থেকে সোনাইপুল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের পাশে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির মালিকানাধীন ভূমির নথি জাল জালিয়াতি করে অধিগ্রহণের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করছে একাধিক ভূমি দুস্য সিন্ডিকেট।

শুধু তাই নয়, অধিক ক্ষতিপূরণের আশায় অনেকে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এসব অনিয়মের স্থানীয় ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারী ও ভূমি দুস্যদের দৌরাত্ম্যের তথ্য মিলেছে সরেজমিন অনুসন্ধানে।

স্থানীয় প্রশাসন বলছেন বিধি মোতাবেক ভূমির প্রকৃত মালিককে দেয়া হবে অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের ন্যায্য টাকা। সত্তরোর্ধ্ব মনির আহমেদ। রামগড় উপজেলার দারোগাপাড়ার এ বৃদ্ধের এখন দিন কাটছে নিজের নামে রেকর্ডীয় ভূমি হারানোর শঙ্কায়। রামগড়ে প্রস্তাবিত স্থলবন্দরের সড়ক প্রশস্তকরণের লক্ষ্মণ রামগড় বাজার থেকে সোনাইপুল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এতে মনির আহমেদের নিজের নামে থাকা ভূমির মালিক কাগজে পত্রে হয়ে গেলেন অন্যজন।
ভুক্তভোগী মনির আহমেদ বলেন, তিনি ৭৭নং দাগে জমির মালিক। এখন ৭৮নং দাগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ৭৮নং দাগের ভূমির মালিককে ভূমি অফিস বলছে না।

শুধু মনির আহমেদ নয়। রামগড়ের অর্ধশতাকি ভূমি মালিক জানেন না, কার নামে অধিগ্রহণের নথিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ভূমির মালিকানা।

প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় ভূমি দুস্যরা ভূমির খতিয়ান ও দাগ জালিয়াতি করে ভুয়া দলিল, বায়নার ভিত্তিতে মালিকানা ও খাস ভূমি নিজেদের নামে করিয়ে নিয়েছেন। অন্য এলাকার ভূমির দলিল অধিগ্রহণভুক্ত ভূমি এলাকায় দেখিয়ে মালিকানা দাবিরও অভিযোগ মিলছে। সরকারি কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অসহায় ভুক্তভোগীরা।
নথি জালিয়াতিতে স্থানীয়দের পাশাপাশি উঠে এসেছে খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা উপজেলা, চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার বাসিন্দাদের নাম। ভূমি অফিসের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে ভূমি ক্রয় ও বায়নার কথা স্বীকার করেছেন তাদের কেউ কেউ।

ভূমি জালিয়াতির তীর রামগড় ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীর আলমের দিকে। কিন্তু তার বক্তব্যে মনে হয়েছে তিনি কিছুই জানেন না। জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য যা হয়েছে তার জন্মের আগে। রামগড় উপজেলা পরিষদের কর্মচারী মাহমুদুল হাসান ও স্থানীয় বাসিন্দা সুমন ধরকে কীভাবে ভূমির মালিক হয়েছে তা অকপটে অস্বীকার করেছেন।

রামগড়ে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন অংশীজনদের নিয়ে অবহিত করণ সভা হয়েছে। সভায় খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) কে.এম. ইয়াসির আরাফাত উন্মুক্ত ও গণশুনানীতে মাধ্যমে ভূমির প্রকৃত মালিক নির্ধারণ করে অধিগ্রহণের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পরিশোধের আশ্বাসও দেয়া হয়।

রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কারবারি বলেন, রামগড়ে স্থল বন্দর নির্মাণকে কেন্দ্র করে সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প কেন্দ্র করে নানা অভিযোগ আসছে। এখানে কোন অসাদু ব্যক্তিকে সুবিধা দেওয়া হবে না। যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত ভূমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ভূমি অফিসের কেউ যদি এসব অনিয়মের সাথে জড়িত থেকে সঠিক প্রমান সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রামের বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে রামগড় অংশে ১৭একর ভূমির অধিগ্রহণের আওতায় আসবে। এতে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও অধিক ক্ষতিপূরণের আশায় অনেকে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করছেন বলে জানা যায়।