খুলনার কয়রায় লোনা পানির আগ্রাসন থেকে পরিবেশ ও জীবন বাঁচাতে মানববন্ধন

‘লবণাক্ততার কারণে আমরা জল খাতি পারিনে, রান্নাবান্না করতি পারিনে, জমিতি তরিতরকারি হয় না, গাছপালা হয় না, খেতে ধান হয় না, লবণ পানিতি গাছপালা সব মোরে যাচ্ছে, পুকুরির জলে নামলি চুলকানি হয়, পেটের পীড়া সব সময় লাগেই থাহে।

আমরা খুব কষ্টের মধ্যি আছি, কাউরি কলিও কোনো কাজ হয় না, কেউই মিষ্টি জলের ব্যবস্থা করে দেয় না,আর লবণ পানি চাইনা, আমরা লবণ পানির আগ্রাসন থেকে বাঁচতে চাই এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন, খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের হড্ডা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মনজু রাণী ব্যানার্জী। তিনি মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের লবণ পানি বিরোধী কমিটি (৭, ৮, ও ৯ নং ওয়ার্ড) আয়োজনে গণমিছিল ও মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে নিজের এ আক্ষেপের কথা গুলো বলেন।

সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের হড্ডা গ্রামে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন লবণপানি বিরোধ কমিটির সভাপতি বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল এর সভাপতিত্বে এ লবণ পানি বিরোধী গণমিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন লবণপানি বিরোধ কমিটির সহসভাপতি পঙ্কজ কুমার সরদার, সাধারণ সম্পাদক মনজিত কুমার, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের হড্ডা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য অচিন্ত কুমার মণ্ডলসহ মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের চার লবণ পানি বিরোধী চার শতাধিক নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, লবণ পানির চিংড়ি ঘের ফসলি জমি গ্রাস করছে। ফলে কমতে শুরু করেছে কৃষিজমি। অন্যদিকে, অবৈধভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ছিদ্র করে লবণ পানি প্রবেশ করাচ্ছেন চিংড়ি ঘের মালিকরা। এতে নদ-নদীও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে পরিবেশ ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে।

মাছের চাষের নামে কৃষি ভূমিতে নদীর লবণ পানি প্রবেশ করানো ফলে অতিরিক্ত লবণাক্ততায় পরিত্যক্ত পড়ে আছে কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুরের ৭,৮,৯ ওয়ার্ডের ২ হাজার বিঘাসহ উপজেলার হাজার হাজার বিঘা কৃষি উপযোগী জমি। প্রভাবশালী মৎস্য চাষীরা তাদের কৃষি ভূমিতে নদীতে থেকে বেঁড়িবাধ কেটে লবণ পানি তোলার কারণে আজ ৫ শতাধিক কৃষক সর্ব শান্ত হয়ে পড়েছেন।

তাই ওইসব প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে লবণ থেকে মুক্তি দিতে এবং আবারও কৃষিতে ফিরাসহ লবণ পানির আগ্রাসন থেকে পরিবেশ ও জীবন বাঁচাতে সরকারি সহায়তা চান স্থানীয়রা।তারা বলেন প্রভাবশালীদের লবণ পনির মাছ চাষের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পারলে, লবণপানি থেকে মিলবে মুক্তি। ফলবে সব ধরনের ফসল।

দুর হবে বেকারত্ব, মিটবে দেশের খাদ্য চাহিদা-এমটাই প্রত্যাশা স্থানীয় কৃষকদের। লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করে ধান চাষ ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনের জন্য স্থানীয় এমপিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী জমির মালিক ও কৃষকরা।