জাবিতে ‘বটতলা কাণ্ডে’ উল্টো শাস্তি পেলেন দুই শিক্ষার্থী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বটতলায় অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাস্তা আটকে ছিলেন এক শিক্ষক। এর প্রতিবাদ করায় দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে ‘শারীরিক লাঞ্ছনার’ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে দুইপক্ষই।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকেই শাস্তি দিয়ে তাদেরকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া।

কোনো তদন্ত ছাড়া তড়িঘড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে একপেশে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনায় সরব হয়েছে অনেক সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী।

সাময়িক বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী হলেন, আইন ও বিচার বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের আরমানুল ইসলাম খান এবং অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ৪০তম আবর্তনের নুরুদ্দিন মুহাম্মাদ সানাউল।

তাদের মধ্যে সানাউল হকের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব না থাকায় বহিষ্কারকালীন সময়ে তার সনদপত্র আটকে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

বহিষ্কারের ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা মাধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।বহিষ্কারাদেশের পর থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের ফেসবুক টাইমলাইন, পেজ ও বিভিন্ন গ্রুপে তাদের ক্ষোভের প্রকাশ অব্যাহত রাখেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত ২৬ জানুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক সহকার্মী উম্মে সাইকাকে নিয়ে খাবার খেতে গিয়ে দোকান সংলগ্ন সংকীর্ণ রাস্তার উপরেই নিজের প্রাইভেটকার পার্কিং করেন ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের নাহরিন ইসলাম খান। এতে করে মানুষের চলাচলে সমস্যা তৈরি হলে সেখানকার দায়িত্বরত গার্ড গাড়িচালককে গাড়িটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলে। তবে নাহরিন ইসলাম গাড়ি সরাতে অস্বীকৃতি জানান।

এ সময় আইন ও বিচার বিচার বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আরমানুল ইসলাম খান এবং অর্থনীতি বিভাগের ৪০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নুরুদ্দিন মোহাম্মদ সানাউলসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত হয়ে গাড়ি সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানালে ওই শিক্ষিকা আরমানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

এরই এক পর্যায়ে নাহরিন ইসলাম খান আরমানকে মারতে উদ্যত হন এবং শিক্ষার্থীদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।

উপস্থিত শিক্ষার্থীরা নাহরীন ইসলাম খানকে কোন বিভাগের শিক্ষক জানতে চাইলে তিনি পরিচয় না দিয়ে বলেন, ‘আমি ১৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করি কোন বিভাগের শিক্ষক তা আমি দেখাচ্ছি।’

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মেহেদী ইকবাল, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষিকাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।

এ ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর আরমানুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সানাউল হকের উল্লেখ করে নাহরিন ইসলাম মৌখিক লাঞ্ছনার অভিযোগ দেন।

পরে আরমানুল ইসলাম খান প্রক্টরের বরাবর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগে অশোভন আচরণ, শারীরিক লাঞ্ছনা ও হুমকির বিচার চেয়ে আবেদন করেন।

এরপর দুই সহকর্মীকে লাঞ্ছনার অভিযোগে রোববার থেকে বিভাগের ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা।

একই দিন শিক্ষকরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।