ঠাকুরগাঁওয়ে ভুয়া কাবিনে বিয়ের অভিযোগে এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

ঠাকুরগাঁওয়ে রুহিয়ায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মনোয়ারা বেগম (৪৩) নামে এক ভুক্তভোগী।

শনিবার (১১মার্চ) বিকেলে রুহিয়া রিপোর্টার্স ও থানা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

লিখিত সংবাদ সম্মেলনে মনোয়ারা বেগম জানান, পীরগঞ্জ থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলমের সাথে আমার পরিচয় হয়। জাহাঙ্গীর আলম পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বারো আউলিয়ার গ্রামের রফিজউদ্দীনের ছেলে। তার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে জাহাঙ্গীর আমার ভাড়া বাসাবাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করে এবং বিয়েসহ শারীরিক মেলামেশার প্রস্তাব দিতো কিন্তু তার আগের স্ত্রী সন্তান আছে জানার পর প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে একদিন জোর করে ঘরে ঢুকে কাবিন নামায় স্বাক্ষর নিয়ে তার সাথে সংসার করতে বাধ্য করে। কিছুদিন যেতে না যেতে সে বাড়িতে নিয়মিত মাদক সেবন করে। আমার কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়া এমনকি নানাভাবে নির্যাতন শুরু করে।

পুলিশে চাকরির কারণে ভয়ে আমিসহ স্থানীয়রা প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। পরবর্তীতে স্ত্রী হিসেবে তার বাড়িতে সংসার করতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে সে যৌতুক বাবদ আড়াই লক্ষ টাকা ও অন্যান্য আসবাবপত্র কেনার জন্য আরো মোটা অংকের টাকা নেওয়ার পরে বিয়ের কাবিন ভুয়া বলে আমাকে স্ত্রী হিসেবে নয় বরং সাময়িক ব্যবহার করার জন্য এসব নাটক করেছে বলে জানায় জাহাঙ্গীর।

আমি নিরুপায়ে হয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করে কোন সুফল না পাওয়ায় গত ২৩/০১/২০২২ ইং তারিখে আদালতে মামলা করি। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। অপরদিকে মামলা হওয়ার পর থেকেই পুলিশ জাহাঙ্গীরের ভাড়া করা গুন্ডা আমাকে নিয়মিত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য এখনও আমাকে হুমকী দিয়ে আসছে। আমাকে ফোন করে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছে। আমি এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছি মামলা করার পর থেকে আমার জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। আমি জানতে পারি জাহাঙ্গীর আলম বর্তমান ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানায় কর্মরত রয়েছেন। তাই আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে ন্যায় বিচার ও মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানাচ্ছি।

অপরদিকে মহিলা ইউপি সদস্য ও তার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে কু-প্রস্তাবের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। শুক্রবার (১০ মার্চ) রাতে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগড় ইউনিয়নের এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ওই এসআইয়ের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যে নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তার কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

এ বিষয়ে মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামী জানান, আমার স্ত্রী ইউপি সদস্য হবার সুবাদে রুহিয়া থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রায় আমাদের বাড়িতে সে মাদক নিয়ে আসতেন। এর মাঝে আমার স্ত্রীকে বিভিন্ন আপত্তিকর কথা এবং তার সঙ্গে আপত্তিকর কাজে লিপ্ত হবার জন্য বলতেন। এমনি কি আমার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকেও কয়েকবার খারাপ কাজের প্রস্তাব দেন। আমার মেয়ে ও স্ত্রী রাজী না হওয়ায় জাহাঙ্গীর আরো বেপরোয়া আচরণ করতে শুরু করেন। তিনি আরও বলেন, আমি প্যারালাইসিসের রোগী। রুহিয়া থানার এস আই জাহাঙ্গীর প্রচুর মাদক সেবন করেন। আমাকে সে মাদক সেবন করতে বাধ্য করতেন।

গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে সে আমার বাড়িতে আসে। মাদক সেবন শেষে ফের আমার স্ত্রীকে খারাপ কাজের প্রস্তাব দেয়। এ সময় আমি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে ঘরে আটকে রেখে গণপিটুনি দেয়। পরে ৯৯৯ নম্বরে কল করলে আটোয়ারী থানার পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়।

জাহাঙ্গীর আলমের সাথে কথা বলতে মোবাইল ফোন যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

রাধানগড় ইউপির চেয়ারম্যান আবু জাহেদ বলেন, আমি শুনেছি পুলিশের এক এস.আই. এর সঙ্গে একটু ঝামেলা হয়েছে। পরে পুলিশ আসলে সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।

রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা জানান, জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ওই নারী টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই টাকা আনতে তার বাড়িতে যায় জাহাঙ্গীর।