ডুবেছে কক্সবাজার, ভোগান্তিতে রোহিঙ্গাসহ লাখো মানুষ

চলছে শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার জোঁ (ভরাকাটাল)। ফলে গত কয়েক দিন ধরেই বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। টানা ভারীবর্ষণ আর সাগরে বাড়ন্ত জোয়ারের পানির কারণে উপকূলের পাশাপাশি প্লাবিত হচ্ছে সমতলের মাঠ-ঘাটও। পানিবন্দি হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক, উপসড়ক। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে পাহাড়ি ঢলের পানি। এতে কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার, রাস্তা-ঘাট ও নানা প্রতিষ্ঠানও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েকদিন ধরে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও গত মঙ্গলবার দুপুর থেকেই শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ। কিছু সময় বিরতি নিয়ে আবার টানা চলে ঝুম বৃষ্টি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ৪১০ মিলিমিটার। আর বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রেকর্ড হয়েছে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। অতিবর্ষণে পাহাড় ধসে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একই পরিবারের ৪ জনসহ ৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে পানিতে ভেসে আসা অজ্ঞাত যুবকের মরদেহও।

এসব ঘটনার পর কক্সবাজার পৌর এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়াতে ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে নিরাপদে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। সরিয়ে নেয়া হয়েছে কিছু কিছু মানুষকেও। কিন্তু পানিবন্দি এলাকার মানুষগুলো ভোগান্তিতে পড়েছেন।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবীদ আব্দুর রাহমান জানান, গত ২ বছরের রেকর্ডে কক্সবাজারে এমন বৃষ্টিপাত হয়নি। মাঝারি ও ভারী বর্ষণ আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে জোয়ারের পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি ভোগান্তি বাড়িয়েছে উপকূলবাসীর। আগের বারের মতো ঈদগাঁও বাজার এলাকার অলিগলি ডুবে আছে বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন শত শত ব্যবসায়ী।

কক্সবাজার সদরের এসিল্যান্ড নাজিম উদ্দিন জানান, টানা বর্ষণে কক্সবাজার সদর উপজেলার প্রায় ৫ হাজার ৫৮০টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন বলে শনাক্ত হয়েছে। অতিবর্ষণে সদরের পিএমখালী, লাইট হাউস, উপজেলা পাড়া ও বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন অঞ্চলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।

ভুক্তভোগীদের মতে, টানা বর্ষণের সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে জোয়ারের পানিও। তার ওপর যোগ হয়েছে পাহাড়ি ঢলের পানি। অতিরিক্ত পানির কারণে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের যোগাযোগ। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী এবং দিনমজুররা।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লুৎফুর রহমান জানান, উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি, রাজারকুল, ফতেখাঁরকুল, কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, চাকমারকুল, জোয়ারিয়ানালা, কাউয়ারখোপসহ ১১টি ইউনিয়নে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বর্ষার ভোগান্তি ও পাহাড় ধসে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

অপরদিকে মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান হোছাইন ইব্রাহীম জানান, উপজেলার ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, হোয়ানকসহ ৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে যাতায়ত। বেড়িবাঁধ না থাকায় একটু ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বাড়লেই মাতারবাড়ি ধলঘাটার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শিবলী নোমান জানান, চকিরয়া উপজেলার কাকরা, কৈয়ারবিল, মানিকপুর, লক্ষ্যারছর, বরইতলী, শাহার বিল, বদরখালী, ফাসিয়াখালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ের ঢল এবং জোয়ারের পানি এবং ভারী বর্ষণের পানিতে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যোগাযোগ বন্ধ থাকে। দক্ষিণ মিঠাছড়ির চেইন্দা এবং লিংকরোড যুব উন্নয়ন অধিদফতর এলাকায় অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

এছাড়াও উখিয়া উপজেলার থাইংখালী ও বালুখালী পয়েন্টেও সড়কে ঢলের পানি উঠে পড়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যানচলাচল বন্ধ থাকে। রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত থাকায় উভয় পার্শ্বে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এ সময় দুর্ভোগের শিকার হন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও কর্মীরা।

যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে স্থানীয়দের রক্ষার্থে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান বলেন, পানিবন্দিদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের জেলা প্রশাসনের আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসার অনুরোধ জানান তিনি।