দুর্নীতি প্রতিরোধে হটলাইন : প্রথমদিনেই ২ হাজার অভিযোগ

দুর্নীতি প্রতিরোধে অভিযোগ কেন্দ্র তথা হটলাইন চালু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হটলাইন চালুর প্রথমদিনেই দুই হাজারেরও বেশি অভিযোগ এসেছে।

এর মধ্যে ৫৫টি অভিযোগ গুরুতর বিবেচনায় নিয়ে তা তদন্তে সংশ্লিষ্ট কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই এ বিষয়ে তদন্তে নামবে দুদক।

বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ‘দুদক হটলাইন-১০৬’ উদ্বোধন করা হয়। এরপর সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত দুই হাজার অভিযোগ জানিয়ে ফোন কল আসে কল সেন্টারে।

তবে কল সেন্টার খোলা ছিল বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সে হিসাবে পরবর্তী দুই ঘণ্টায় আরও অভিযোগ আসার কথা।

এ প্রসঙ্গে দুদকের অভিযোগ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সেলিনা আক্তার মনি বলেন, জনগণের সঙ্গে দুদকের প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপন ও দ্রুত দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ প্রাপ্তির জন্য হটলাইন চালু হয়েছে। প্রথমদিনই ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বেলা ৩টা পর্যন্ত দুই হাজারেরও বেশি কল এসেছে। এখান থেকে ৫৫টি অভিযোগ গুরুতর বিবেচনায় নিয়ে তদন্তের জন্য কমিশনারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে তদন্ত করা হবে।

দুপুরে সরেজমিনে দুদক কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কম্পিউটারের সামনে বসে দুদকের পাঁচ কর্মকর্তা কল রিসিভ করছেন। ফোনে অভিযোগকারীর অভিযোগ শুনে তা লিখে রাখছেন।

কী ধরনের অভিযোগ আসছে এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, অনেকে ফোন দিয়ে অভিযোগের পদ্ধতি ও করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইছেন। অনেকে অভিযোগ করছেন, সেগুলো লিখে রাখছি।

ময়মনসিংহ থেকে একজন ফোন করে জানিয়েছেন, তার ১০ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। কিন্তু স্থানীয় ভূমি অফিসে অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না ভূমি কর্মকর্তারা। তারা দখলকারীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

হাবিব নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এক সরকারি কর্মকর্তা। এখন চাকরিও দিচ্ছেন না, টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। তাহলে এটা দুনীর্তি কিনা, প্রশ্ন তার।

এ প্রসঙ্গে সেলিনা আক্তার মনি বলেন, টেলিফোন বা যেকোনো মোবাইল ফোন থেকে দুদক হটলাইনে কল করা যাবে। এই কল হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এজন্য মোবাইল থেকে কোনো টাকা কাটবে না।

তিনি বলেন, একাধিক ব্যক্তি একই সঙ্গে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগকারীর নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে। এমনকি অভিযোগকারী চাইলে তার বক্তব্য রেকর্ডও করা যাবে। অফিস চলাকালীন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যে কেউ কল করতে পারবেন।

জনগণের সঙ্গে দুদকের প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপনে ও দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পেতে হটলাইন খোলা হয়েছে। এতে দুর্নীতির ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই অথবা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে এমন অভিযোগ পেলে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবে দুদক। এর মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী জনমত সৃষ্টি এবং দুদকের প্রতি জনআস্থা সৃষ্টি হবে বলে আশাবাদী দুদক কর্মকর্তারা।

এ প্রসঙ্গে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। আমরা যারা রক্ষক হিসেবে আছি, তারাই ভক্ষক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছি। এ প্রয়াস বন্ধ হওয়া চাই।

জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, হটলাইন-১০৬ খোলা হয়েছে। এতে যেকোনো ব্যক্তি দুর্নীতির ঘটনা ঘটার আগে ও পরে অভিযোগ করতে পারবেন। ফলে আমরা ত্বরিত গতিতে ব্যবস্থা নিতে পারব।

এ হটলাইন খোলার মাধ্যমে দুদকের সঙ্গে মানুষের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন হলো বলে মনে করেন তিনি।