নরসিংদীতে লাবিবা পরিবহনের ফাদে পড়ে ঝড়ে পড়ছে একাধিক প্রাণ, চলছে বেপড়োয়া গতিতে

নরসিংদী জেলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে লাবিবা পরিবহন নামে বাসটি এখন মরণফাদে পরিণত হয়েছে। তাদের বেপরোয়া গতি ও চালকদের অসাবধনাতার কারনে প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা। এতে করে প্রাণনাশের ঘটনা তো ঘটছেই পাশাপাশি মারাত্মক আহত হচ্ছে অনেকেই।

গত শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের শিমুলতলী গ্রামে লাবিবা পরিবহন বেপরোয়া গতিতে ছুটে এসে একটি সি.এন.জিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই ৩ জন নিহত হয়। নিহতরা হলেন- রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের বড়চর গ্রামের মো. কাসেম মিয়ার স্ত্রী দোলনা বেগম (৫৫), তার নাতি আরিয়ান (৭) ও বেলাব উপজেলার ধুকুন্দি গ্রামের রানা মিয়া (১৮)।

নিহত পরিবারের আত্মীয় মোসাঃ কুলসুম বেগম জানান, লাবিবা পরিবহনটি প্রায় সময়ই নরসিংদী জেলায় দূর্ঘটনা ঘটিয়ে এসেছে। এতে করে আমার পরিবারের ৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। অথচ লাবিবা পরিবহনের কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত আমার পরিবারকে দেখার তো দূরের কথা সান্তনা দেওয়ার জন্যও কেউ আসেনি। আমি সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি, এ পরিবহনের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে তাদের বিরুদ্ধে দ্রæত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।

কিছুদিন আগেও হিংস্র গতিও রং রোডে গিয়ে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় ৫/৬ জন গুরতর আহত হয়, অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছেন অসংখ্য মানুষ। নরসিংদীর বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ডের বিভিন্ন পয়েন্টে শুধু বেপরোয়া গতি নয়, ওভারটেক করতে না দিলে সামনের গাড়ির চালককে শাসান লাবিবা পরিবহনের চালক। এমনকি পুলিশকে মাসিক মাসুহারা দিয়ে চালাচ্ছে এই লাবিবা পরিবহন জানান ৯৮ এর চালক।

ট্রাক এবং লাবিবা পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে স্থানীয় সাংবাদিক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে ঐ সাংবাদিককে বিভিন্ন মামলা দিয়ে ফাসিয়ে দিবে বলে হুমকি সহ গুম করার হুমকি দিচ্ছে। অথচ এই নরসিংদীতে বিগত বছরে প্রায় ১০ টিরও অধিক মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটিয়েছে এই লাবিবা পরিবহন।

এদিকে ভৈরব থানার তৎকালীন হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান সংবাদকর্মী রুদ্রকে বলেন, লাবিবা পরিবহনের বিরুদ্ধে আমরা অনেক অভিযোগ আমরা পেয়েছি।

লাবিবা পরিবহনের চালকরা প্রায় সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেক করেবলে জানায় অন্যান্য বাস চালক ও হেলপাররা। আবার সেকেন্ডের চেয়ে কম সময়ের ব্যবধানে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে অন্তত ১০ বার, জানিয়েছেন এই গাড়ীতে থাকা যাত্রী কাউসার আহম্মেদ।

লাবিবা পরিবহনের বাসের ক্ষিপ্র গতির কাছে যেন অসহায় বাকি সব বাস মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহন। স্প্রিডব্রেকার, মোড় আর পুলিশের সাইনবোর্ড সিগন্যালকে তুচ্ছ করেই বাসটি চলছে মহাখালীর পথে। মহাসড়কে ৮০ কিলোমিটারের উপরে গতি তোলার নিয়ম নেই কিন্তু লাবিবা পরিবহনের বাসটিকে কিছুক্ষণ পরপরই ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে তুলেছেন চালক-এমনটা দেখা যায়।

লাবিবা পরিবহনের মালিক লিটনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি। এক পর্যায়ে সংবাদকর্মী রুদ্রকে লাবিবা পরিবহনের দায়িত্বে থাকা এক কর্মচারী সুজন জানান, আমরা পুলিশকে মাসিক মাসুহারা দিয়ে হাইরোডে চালাচ্ছি গাড়ি। আমরা কীভাবে গাড়ী চালাবো সেটাই আমরাই ভালো বুঝি, কারো কাছে জবাবদিহি করতে আমরা বাধ্য নই, জানিয়েছেন এয়াপোর্ট কাউন্টার থেকে।

এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক রোডের হাইওয়ে জুনের পুলিশ সুপার সংবাদকর্মী রুদ্রকে বলেন, লাবিবা পরিবহনের অনিয়মের বিষয়টি যেহেতু আমি শুনেছি সঠিক তদন্ত করে অতি দ্রুত আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে এই পরিবহনের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।