নরসিংদীর ঢাকা—সিলেট মহাসড়কে মাহমুদাবাদ এলাকায় পুলিশের চাঁদাবাজি

নরসিংদী ঢাকা— সিলেট মহাসড়কে ভৈরবে হাইওয়ে পুলিশকে মাসিক চাঁদা দিয়ে চলছে সি.এন.জি সহ বিভিন্ন যানবাহন। রাজধানী ঢাকার সন্নিকটবতীর্ জেলা নরসিংদী জেলাটি শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত।

এ জেলায় পড়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের বড় একটি অংশ। ঢাকা—সিলেট মহাসড়কটিতে চাঁদাবাজ চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এখানে চাঁদা ছাড়া যেন ঘোরে না কোনো গাড়ির চাকা। ঢাকা—সিলেট মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন থেকে মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকার চাঁদা আদায় হয়। জানা যায়, ভৈরব হাইওয়ে পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর সফর উদ্দিন প্রতি মাসেই চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে বিভিন্ন কৌশলে মামলা দিয়ে গাড়ি আটক করা হয়।

বিগত সময়ে এই পুলিশের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে নারায়ণপুর বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা—সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে গাড়ির চালকরা। তবুও যেন থেমে নেই চাঁদাবাজি। হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও মালিকরা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এ মহাসড়ক থেকে হাইওয়ে পুলিশ প্রতি মাসে চাঁদা হিসেবে অন্তত ১০/১৫ লাখ টাকা আদায় করে। হাইওয়ে পুলিশের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পরিবহন চালক ও পরিবহন মালিকরা।

পুলিশের প্রভাব ও ক্ষমতা খাটিয়ে ঢাকা—সিলেট মহাসড়কে বেলাব থানার আওতায় মাহমুদাবাদ, নীলকুঠি, বাড়িচা হাইওয়ে এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টের নামে চাঁদাবাজি চলে বলে অভিযোগ স্থানীয় পরিবহন মালিক এবং চালক—শ্রমিকদের। এ মহাসড়কটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন রাস্তা হওয়ায় এটাকে পুঁজি করে সফরউদ্দিন তার সোর্সের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করছে বলে জানা গেছে। এসব কারণে দেশের দূর—দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসে। এ সবকিছুকে ঘিরে গড়ে উঠেছে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক ও পিকআপ স্ট্যান্ড। একই সঙ্গে বেড়েছে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজিও। ঢাকা—সিলেট মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো গাড়ি চলাচল করে। ভৈরব থেকে ছেড়ে আসা গাড়িবেলাব নারায়ণপুর থেকে সাহেপ্রতাব, ভেলানগর সহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করা বাস, ট্রাক, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার ও ট্রাকের বেশিরভাগই ফিটনেসবিহীন ও কাগজপত্র ছাড়া চলছে। এসব ফিটনেসবিহীন যানগুলো হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে চলছে বলে অভিযোগ।

পরিবহন মালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভৈরব থেকে বাড়িচা পর্যন্তসিএনজি চলাচল করে ৭০—৮০টি। সি.এনজি গুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বাড়িচা বাসস্ট্যান্ড ও ভৈরব বাসস্ট্যান্ড থেকে পুলিশ পায় মাসে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। মহাসড়কের পাশের চোরাই তেলের দোকানগুলো থেকে সোর্স মারফত এক ব্যক্তির মাধ্যমে মাসে ১০ হাজার ও আরেকজনের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা পায় হাইওয়ে পুলিশ। এ ছাড়া আরও কিছু চোরাই তেলের দোকান থেকে মাসিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় হয়। বাড়িচা বাসস্টেশনের আরেকজনের মাধ্যমে পায় মাসে ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া দূরপাল্লার বাসগুলো থেকে মাসে প্রায় ১ লাখ টাকার মতো চাঁদা আদায় হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার অটোরিকশা গ্যারেজগুলো থেকেও প্রতি মাসে টাকা পায় হাইওয়ে পুলিশ। ভেলানগর বাসস্টেশন, বারিচা থেকে প্রাইভেট কার, পিকআপ, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান থেকে কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে চাঁদা আদায় হয়। প্রতিটি গাড়ি থেকে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। এ সময় হাইওয়ে পুলিশের কারও পোশাকে নেমপ্লেট থাকে না বলে জানান পরিবহনচালকরা। হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে রেকার বাণিজ্যেরও অভিযোগ। বনিবনা না হলেই রেকার লাগিয়ে থানায় নেওয়া হয় গাড়ি।

হাইওয়ে পুলিশকে নিয়মিত চাঁদা দেওয়া কয়েকজন বলেন, চাঁদা না দিলেই কয়েক দিন পরপর লোকদেখানো অভিযান পরিচালনা করে। চাঁদা দিলে আবার সব ঠিকঠাক থাকে। প্রতি মাসে ১—৫ তারিখের মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ বক্সে গিয়ে চাঁদা দিয়ে আসতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সি.এনজি চালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গাড়ির জমা দিই ৫০০ টাকা। মাসিক চাঁদা দিতে হয় ২৫০০ টাকা। যা টাকা ইনকাম করি তা গাড়ির জমা আর চান্দা দিতেই চইলা যায়। সিএনজির কাগজপত্র না থাকায় প্রতি মাসে ভৈরব হাইওয়ে পুলিশকে ২৫০০ টাকা কইরা দিতে অয়। আবার বারিচা হাইওয়ে পুলিশরে দিতে অয় ৬০০ টাকা। চাঁদা না দিলে সিএনজি রাস্তায় চলাচল করতে দেয় না।’
ফারুক নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক বলেন, ‘সরকার মহাসড়কে সিএনজি বন্ধ করলে আমার কি! আমি হাইওয়ে পুলিশকে প্রতি মাসে টাকা দিই, এ কারণে তারা আমার সিএনজি ধরে না।’
অভিযোগের বিষয়ে ভৈরব হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা সফর উদ্দিনের (মোবাইল: ****৬৭৬) নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারমোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
চাঁদা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ভৈরব হাওয়ে থানা পুলিশ ক্যাম্পের এক কনস্টেবল জানান, ‘দায় স্বীকার করে তিনি জানান এ বিষয়ে নিউজ করেও কোন লাভ হবে না। কারন, প্রতি জায়গাই টাকা দিতে হয়। রিপোর্ট করলেও টাকা দিয়ে এসব বিষয় ধামাচাপা দেওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ভৈরবহাইওয়ে থানার ওসির নিকট জানতে চাইলে, তিনিও ব্যস্ততা দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।