পঞ্চগড়ের অমরখানা ইউনিয়নে টিসিবি’র পণ্য বিতরণে নানান অনিয়ম

পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র পণ্য বিতরণে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে টিসিবি ডিলার গোলাম সারওয়ারের বিরুদ্ধে। সে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মেসার্স তিশা এন্ড লোটাস এন্টারপ্রাইজ নামীয় প্রতিষ্ঠানের ডিলার।

গত রোবাবার, সোমবার ও মঙ্গলবার (৭,৮ ও ৯এপ্রিল) উপজেলার অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখতে ও জানতে পারা যায়, গত রোববার সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি মসুরের ডাল ও দুই লিটার সয়াবিন তেল ৫৪০টাকা প্যাকেজ মূল্যে বিতরণ করা হয়।

টিসিবি পণ্য বিতরণ করার সময় পাঁচ কেজি চালে কম দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ৭০০গ্রাম, দুই কেজি মসুরের ডালে ২০০গ্রাম এবং এক কেজি চিনিতে ১২০গ্রাম। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে রাতারাতিই পরিমাপ ঠিক করে পরের দিন সোমবার আবারো টিসিবি পণ্য বিতরণ করেন দুপুর পর্যন্ত।

ওই দিন ফ্যামেলি কার্ডধারীদের নিকট প্যাকেজ মূল্যে টিসিবি পণ্য বিতরণের কথা থাকলেও তা বিতরণ করা হয়েছে পরিচিতজন ও কতিপয় ইউপি সদস্যদের কাছে। এরপর কার্ডধারীরা তাদের পণ্য না পেয়ে পরিষদ চত্ত¡রে ডিলারের অনিয়মের বিরুদ্ধে ক্ষোপ প্রকাশ করতে থাকলে এক পর্যায় টিসিবি ডিলার উপায়অন্ত খুঁজে না পেয়ে তড়িঘড়ি করে পরিষদ ত্যাগ করেন এবং ত্যাগ করার সময় বাদ পড়া কার্ডধারীদের তার পরের দিন টিসিবি পণ্য দিবেন জানিয়ে চলে যান।

এরপর মঙ্গলবার পৌণে ১২টার দিকে সাদা কাগজে লিখা ৩৬জন কার্ডধারীদের নামের তালিকা অনুসারে চাল না দিয়ে টিসিবি পণ্য বিতরণ করেন। এরই মধ্যে অনেকেই টিসিবি পাননি আবার অনেকেই ডিলারের অনিয়ম সহ্য করতে না পেরে টিসিবি পণ্য নিতে আর ফিরে আসেননি।

জানা যায়, ওই ইউনিয়নে উপকারভোগী কার্ডধারীর সংখ্যা ২ হাজার ৩৩টি।

কার্ডধারী হয়েও পণ্য নিতে পারেননি নরদেবপাড়া গ্রামের জামাল বলেন, তিনি টিসিবি বিতরণের প্রথম দিন টিসিবি পণ্য নিতে আসলে তাঁর কাছ থেকে ফ্যামেলি কার্ড ও টাকা নিয়ে পরে টিসিবি পণ্য না দিয়ে কার্ড আর টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। জামাল বলেন, তিনি সকাল ১১টার দিকে আসলেও তাকে টিসিবি পণ্য দেওয়া হয়নি। পরের দিন আবারও আসলে টিসিবি নেই জেনে বাড়িতে ফিরে যেতে হয়েছে।

কার্ডধারী ভুক্তভোগী ঠুটাপাকুরী গ্রামের আবুল কাশেমসহ আরও কয়েকজন বলেন, আমরা সোমবার টিসিবি পণ্য নিতে আসলে ডিলার জানাই তাদের কাছে কোনো টিসিবি পণ্য নেই। পরে গন্ডগোলের সৃষ্টি হলে ডিলার মঙ্গলবার ১১টার দিকে টিসিবি দিবে আসতে বলছেন। তবে ডিলারের এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা ক্ষোপ প্রকাশ জানিয়েছেন।

দক্ষিণ তালমা গ্রামের রেজাউল করিমের মা রেজিয়া আক্তার বলেন, আমার ছেলে রোববার টিসিবি পণ্য নিয়ে আসছে। বাড়িতে নিয়ে এসে দেখি পাঁচ কেজি চালে ৭০০গ্রাম কম, দুই কেজি মসুরের ডালে ২০০ গ্রাম কম এবং এক কেজি চিনিতে ১২০গ্রাম কম বিতরণ করা হয়েছে।

টিসিবি পণ্য ওজনে কম দেওয়ার বিষয়ে ইউপি সদস্য মানিক মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চিনিতে ২০০গ্রাম ওজনে কম দেওয়ায় অভিযোগের ভিত্তিতে এবং আমি নিজেও দেখার পর ইউএনও মহোদয়কে অবগত করি এরপর ইউএনও মহোদয় বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানালে চেয়ারম্যান নিজেই ওজনে কম দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।

প্রথমত টিসিবি ডিলার গোলাম সারওয়ারকে মুঠোফোনে পরিচয় দিয়ে কার্ডধারী ভুক্তভোগীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলে কলটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর পরিষদে আসলে আমাকে (সাংবাদিককে) দেখে চড়াও হয়ে উঠেন এবং বলতে থাকেন আপনি কে? আপনি আমার কাছ থেকে জানার কে? আপনি আমাকে চিনেন! আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও আমি দলীয় ব্যক্তিত্ব।

তার (ডিলারের) এসব কথায় বললাম ভাই পরিচয় দেওয়ার পরেও যদি আমাকে আপনার সন্দেহ মনে হয় তাহলে যেকোনো সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করতে পারেন। এরপর কিছুটা শান্ত হয়ে বলেন, ভাই ইউনিয়নের একেকজন মেম্বার ১০ থেকে ১২টি করে টিসিবি নেয়ার কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

আপনি কেন মেম্বারদের টিসিবি পণ্য দিলেন জিজ্ঞাসায় কোনো সদুত্তোর পাওয়া যায়নি এবং ওজনে কম দেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেও কোনো সদুত্তোর মিলেনি। পরে অনিয়মে ভরপুর ডিলার তাঁর দেখা করতে বলেন।

অত্র ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ট্যাগ টীমের আহবায়ক মোঃ নুরুজ্জামান নুরু বলেন, তিনি বিষয়টি ইউএনও মহোদয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন। তিনি বলেন, চিনি ও মসুর ডালে ৩০ থেকে ৪০গ্রাম করে কম বিতরণ করা হয়েছে যা ধরার মধ্যে পড়ে না। চালে কম দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানেন না।

কার্ডধারীরা টিসিবি পণ্য না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তোর মিলেনি তবে তিনি বলেন, আমাদের কতগুলো মেম্বার রয়েছে তদারকি না করে তাদের চিন্তা করেন।

এ বিষয়ে ট্যাক টীমের সদস্য সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের টেষ্টা করেও যোগাযোগ করার সুযোগ হয়নি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে প্রাথমিক তদন্ত করে একটি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। মূলত তদন্ত সাপেক্ষে ডিলারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।