পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের গ্রামে আগুন দিয়েছে সেনাবাহিনী

রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশছাড়া করতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবেই তাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে। স্যাটেলাইট থেকে তোলা রাখাইন রাজ্যের বেশ কিছু ছবি বিশ্লেষণ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ তথ্য জানিয়েছে।

স্যাটেলাইটে তোলা ছবি, স্যাটেলাইটে আগুন সনাক্ত করতে পারে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং ওই অঞ্চল থেকে পাওয়া ছবি ও মানুষের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, রাখাইনে গত তিন সপ্তাহে ৮০টিরও বেশি স্থানে বিশাল এলাকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে এমন সংঘবদ্ধ দলগুলো একসাথে মিলে এই কাজ করছে । গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে তারা পলায়নপর মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স বিভাগের পরিচালক তিরানা হাসান বলেছেন, ‘এটা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে রাখাইন রাজ্যের উত্তরাংশে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করতে পরিকল্পিতভাবে অগ্নিসংযোগ করেছে।’

রাথিডং শহরের প্যান কিয়াং গ্রাম থেকে আসা এক প্রত্যক্ষদর্শী গত ৪ সেপ্টেম্বর ভোরে সেনারা এসে কীভাবে গ্রামে অগ্নিসংযোগ করেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, তার গ্রাম প্রশাসককে বলেছিল ভালো চাইলে সকাল ১০টার মধ্যে গ্রাম ছেড়ে যাও। এরপরই সবকিছুতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তার পরিবারের সদস্যরা জিনিসপত্র গোছগাছ করছিল। এসময় তিনি দেখতে পান একটি আগুনের গোলা এসে তার বাড়িটিকে গ্রাস করে ফেলে। এরপরই তারা আতঙ্কে পালিয়ে আসেন। যে সব গ্রামবাসী ধানক্ষেতে লুকিয়ে ছিল তারা সেনা সদস্যদের রকেট লাঞ্চার ব্যবহার করে অগ্নিসংযোগ করতে দেখেছে।

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, অগ্নিসংযোগ ও সম্পত্তি ধ্বংসের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। কারণ বর্ষকালে আকাশে মেঘের কারণে সব স্থানের অগ্নিসংযোগের ছবি স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

গত ২৪ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা হামলা চালায়। এরপরই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা দমন-নিধন অভিযানে নামে। প্রানে বাঁচতে গত তিন সপ্তাহে ৩ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।