পেটের দায়ে পানের দোকানে কাজ করছে এমএ-বিএড করা যুবতী

লড়াইটা নিজের সঙ্গে ছিলই। দৈহিক অক্ষমতার। আর পাঁচজনের মতো সহজ জীবন নয়। সেই বাধা অবশ্য তিনি অতিক্রম করেছেন। নিজের চেষ্টায় উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন।

তবে, গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো পরিবারে জাঁকিয়ে বসেছে দারিদ্র। অথচ পরিবারের একমাত্র রোজগেরে আজ শয্যাশায়ী। অসুস্থ বাবা। একমাত্র বোন আবার ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী। বিজ্ঞান শাখার। মা গৃহবধূ। অগত্যা সংসারের জোয়ালটা তাকেই তুলে নিতে হয়েছে।

বাবার চিকিৎসার খরচ। ছোটো বোনের পড়াশোনার খরচ। টাকা না এলে চলবে না সংসারটাও। অথচ উচ্চশিক্ষা লাভ করেও জোটেনি চাকরি। বিকল্প পথই সম্বল।

তার কাছে বিকল্প পথ হয়ে উঠেছে, পানের দোকান। হ্যাঁ, ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর এবং বিএড করা প্রতিবন্ধী যুবতিকে সংসারের হাল ধরতে বেছে নিতে হয়েছে পানের দোকানের ব্যবসা। তা থেকে অল্পবিস্তর যা আয় হয় তা দিয়েই চলছে সংসার।

কিন্তু দিন দিন বাবার চিকিৎসার ওযুধের খরচ বাড়ছে। বোনের টিউশন খরচও কম নয়। তাই পান বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে দোকানে আরও কিছু পসার সাজিয়েছেন হালফিলে। যাতে রোজগারটা একটু বাড়ে। আর্থিক সমস্যার সুরাহা হয়।

অসম এই লড়াই পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ স্কুল রোডের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী প্রিয়া সাহার। পরিবারের সবার মুখের ভাত জোগাড় করতে খিল্লি পান সাজতে হয় তাঁকে। রাস্তার ধারের দোকানে বসে।

সারাদিন পান সাজতে সাজতেই নিজের যন্ত্রণা লুকানোর একটা ব্যর্থ চেষ্টা চালান। শারীরিক-আর্থিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে উচ্চশিক্ষা লাভের পরও জোটেনি চাকরি। সেই যন্ত্রণা। রাজ্যের লাখ লাখ বেকার যুবক-যুবতির মতোই প্রিয়াকেও কুরে কুরে খায় সেই জ্বালা।

২০১৫ সালে ইংরেজিতে স্নাতক। ২ বছর পর স্নাতকোত্তর। প্রাথমিক শিক্ষকতার চাকরির জন্য নিয়েছেন ২ বছরের বিএড প্রশিক্ষণ। রয়েছে ৫০ শতাংশ প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটও। তবুও জোটেনি একটা সরকারি চাকরি। এতকিছু সত্ত্বেও হার মানেননি প্রিয়া। ভোগেননি অবসাদেও। শারীরিক প্রতিবন্ধতাকে সঙ্গে নিয়েই নেমে পড়েছেন পেটের জ্বালা মেটানোর লড়াইয়ে।

তবে, তার এই লড়াই কষ্ট দেয় জন্মদাত্রীকে। মা কৃষ্ণা সাহা বলেন, “এটা কি ভালো লাগে? একদমই ভালো লাগছে না। এত অভাব, এত কষ্ট। এত কষ্ট করে উচ্চশিক্ষিত হল মেয়েটা। কিন্তু, আজ পর্যন্ত একটা চাকরি জুটল না।”

চোখ জল নিয়ে বলেন, “আমি খুবই অসহায়। চাকরি না থাকায় মেয়েটাকে বিয়ে দিতে পারছি না। এভাবেই আমার দিন চলছে। কোনওরকমে। অনেকে ওর থেকে কম নম্বর পেয়েও চাকরি পেয়ে গেছে। আমার মেয়ের হয়নি।” তবে, হাল ছাড়তে নারাজ প্রিয়া। তাই তো থামাননি লড়াই।