বান্দরবানের লামায় ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০একর ভূমি এলাকা পরিদর্শন করবে সংসদীয় কমিটি

পার্বত্য জেলার বান্দরবান লামা উপজেলায় বুধবার (২৬শে এপ্রিল) ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০একর ভূমি এলাকা সংসদীয় কমিটি পরিদর্শন করবে।

জাতীয় সংসদের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২নং সাব-কমিটির উদ্যোগে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় এবং রাবার বাগান(লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ)-এর জমি সংক্রান্ত জটিলতা সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।

গত ১৬ই এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির পরিচালক(আইন) ও কমিটি সচিব হুমায়রা তাসমিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে (নং-১১.০০.০০০০ ৭২১.৫৭.০০৩.২৩. (সাক-২)/২৭) এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট ভূমি এলাকা পরিদর্শনের জন্য চট্টগ্রাম-৬ আসনের এমপি এ,বি,এম ফজলে করিম চৌধুরীকে আহবায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ২৯৯নং পার্বত্য রাঙামাটি আসনের এমপি দীপংকর তালুকদার, ২৯৮নং পার্বত্য খাগড়াছড়ি আসনের এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও তিন পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত মহিলা আসনের(৩০৯মহিলা আসন-৯) এমপি বাসন্তি চাকমা।

কমিটির সদস্যরা মঙ্গলবার(২৫শে এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন এবং বান্দরবান সার্কিট হাউজে রাত যাপনের পর আগামীকাল ২৬শে এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার সময় লামায় ম্রো সম্প্রদায়, ত্রিপুরা সম্প্রদায় এবং রাবার বাগান জমি সংক্রান্ত জটিলতা সংশ্লিষ্ট স্থান পরিদর্শন করবেন। এরপর বৃহষ্পতিবার(২৭শে এপ্রিল) তারা বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠকে মিলিত হবেন।

উল্লেখ্য, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের কোম্পানি কর্তৃক ২০২২সালের ৯ই এপ্রিল থেকে লামা সরই ইউনিয়নে বসবাসরত ম্রো ও ত্রিপুরাদের ভোগদখলীয় ৪০০একর জুমভূমি জোরপূর্বক বেদখলের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে কোম্পানির লেলিয়ে দেয়া দুর্বৃত্ত কর্তৃক জুমভূমিতে আগুন দিয়ে বাগান-বাগিচা, খেত ও প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে দেয়া, ভূমি রক্ষায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, পাড়াবাসীদের নির্মিত বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর, পানির উৎস ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ, বাগান কেটে দেয়া, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরসহ নানা অত্যাচার সংঘটিত করা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানির দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় ইতোমধ্যে ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা মথি ত্রিপুরা ও লাংকম পাড়ার কার্বারি লাংকম ম্রোকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মথি ত্রিপুরা জামিনে মুক্তি পেলেও লাংকম ম্রো এখনো কারাগারে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন।

গত ১লা জানুয়ারি দিবাগত মধ্য রাতে রাবার কোম্পানির লেলিয়ে দেয়া দুর্বৃত্ত কর্তৃক ম্রো পাড়াবাসীদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে পরবর্তীতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দু’দফায় উক্ত এলাকা পরির্দশন করে পাড়াবাসীদের আশ্বস্ত করেছিলেন। তার আগে গত বছর বান্দরবান জেলা পরিষদ কর্তৃক গঠিত কমিটি উক্ত এলাকা পরিদর্শন করে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের জমি লিজ বাতিলের সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়াবাসীরা এখনো এর কোন প্রতিকার পাননি বরং প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকিসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

এদিকে রাবার কোম্পানি কর্তৃক ৪০০একর জুমভূমি জবরদখল চেষ্টার প্রতিবাদে ও উক্ত জমি রক্ষার্থে স্থানীয় ম্রো-ত্রিপুরা জনগণ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। এ জন্য তারা লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি গঠন করেছেন। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃক জমি বেদখল, জুম ভূমি-ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, পানির উৎসে বিষ প্রয়োগসহ হয়রানিমূলক বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদে এবং ভুমি বেদখল বন্ধ ও রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে।

সিএইচটি কমিশনসহ দেশের বিভিন্ন সংগঠনও ম্রো-ত্রিপুরাদের উক্ত ৪০০একর জুমভূমি জবরদখল বন্ধের দাবি জানিয়েছে।