বিয়ের আশায় পালাচ্ছেন রোহিঙ্গা নারীরা

সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপকূলে আশ্রয়শিবির ছেড়ে পালানো যেসব রোহিঙ্গা উদ্ধার হয়েছেন, তার মধ্যে নারী তুলনামূলক বেশি। এসব নারীর অনেকেই জানিয়েছেন, বিয়ে করে সংসার পাতার আশায় তাঁরা সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চিন্তা করেছিলেন। সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবকদের সঙ্গে অনেকেরই বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাওয়ার খরচ বহন করছেন ওই যুবকেরাই।

গত কয়েক দিনে বিজিবি-পুলিশের হাতে উদ্ধার হওয়া ২৫ নারীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত চার দিনে উপকূলীয় এলাকা থেকে ৯২ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে নারী ৪৬ জন, পুরুষ ২৬ জন ও ২০ জন শিশু। উদ্ধার হওয়া নারীদের বয়স ১৩ থেকে ২২ এর মধ্যে। পাচারে সহায়তা করার অভিযোগে আটক হয়েছেন চারজন দালাল। দালালেরাই সমুদ্র পাড়ি দিতে রোহিঙ্গা নারীদের প্ররোচিত করছেন বলে জানা গেছে।

একে নেতিবাচক প্রবণতা উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) টেকনাফের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবুল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা সব সময় সংকট তৈরি করে চলেছে। মানবিক চিন্তা করে বাংলাদেশে তাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও তারা সব সময় এ দেশের আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করার চিন্তাভাবনায় রয়েছে। এখনই শরণার্থী শিবির ছেড়ে পালানোর চেষ্টা রোধ করতে হবে। অন্যথায় তাদের দেখাদেখি স্থানীয়রা এ বিপদে পা বাড়াতে পারে।

উদ্ধার হওয়া নারীদের একজন উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের তাহমিনা বেগম (২০)। তিনি জানান, তাঁদের মিয়ানমারের রাখাইনের বাড়িতে ছিল মাছের খামার। সংসারে আয়-রোজগারও ছিল ভালো। সেই ঘরবাড়ি রেখে এখন ঠাঁই হয়েছে উখিয়ায় পাহাড়ের এই ঝুপড়ি ঘরে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থার দেওয়া ত্রাণে চলছে পরিবার। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে বয়সটাও বাড়ছে। বিয়ে তো করতে হবে। অনেক চিন্তা করে পরিবারের সিদ্ধান্তে মালয়েশিয়া যাওয়ার চিন্তা করি।’

এই নারী জানান, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত এক রোহিঙ্গা যুবকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। ওই ছেলের পরিবারও কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে বাস করে।

কিন্তু বিজিবির হাতে ধরা পড়ায় আপাতত বিয়ের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না তাঁর।

উদ্ধার হওয়া কয়েকজন নারী জানিয়েছেন, এখানে শিবিরে বিয়ে করতে চাইলে বরপক্ষকে বড় অঙ্কের নগদ টাকা দিতে হচ্ছে। বেশির ভাগ পরিবারের সে সামর্থ্য নেই। সে তুলনায় মালয়েশিয়ায় বিয়ের বাজারে রোহিঙ্গা নারীদের চাহিদা রয়েছে। কারণ সে দেশের শ্রমবাজারের একটি অংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা যুবকদের দখলে। রোহিঙ্গা পুরুষের তুলনায় সেখানে রয়েছে রোহিঙ্গা নারীর অভাব।

টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের একাধিক দলনেতা (মাঝি) জানিয়েছেন, কিছু সহজ-সরল রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে দালাল চক্রের সদস্যরা শিবির থেকে বের করছেন। তাঁরা বলেন, অধিকাংশ নারী বিয়ের আশায় মালয়েশিয়া যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আছাদুদ জামান চৌধুরী বলেন, হঠাৎ করে শিবির থেকে পালিয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তবে বিজিবি সতর্ক আছে এবং পরিস্থিতিতে কঠোরভাবে নজর রাখছে।