রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত থাকার কথা নিশ্চিত করলো যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেন যুদ্ধে পরস্পর বিরোধী অবস্থান থাকার পরেও মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে যোগাযোগের চ্যানেল খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান।

নিউ ইয়র্কে বক্তব্য রাখার সময় সুলিভান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেই ক্রেমলিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তারা ভাল করেই জানেন তারা কার সঙ্গে কথা বলছেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

খবরে জানানো হয়, ইউক্রেনে যাতে কোন পারমাণবিক উত্তেজনা তৈরি না হয় সেজন্য রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। কয়েকদিন আগেই ওয়াশিংটন জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানানো হয়, জ্যাক সুলিভানের নেতৃত্বেই তার রুশ সমকক্ষ নিকোলাই পাত্রুশেভের সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরে ওই আলোচনাটি চলছে। সেই তথ্য অস্বীকার করেনি হোয়াইট হাউজ। তারই প্রেক্ষিতে মূলত সুলিভান এই বক্তব্য দিলেন। মার্কিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কীভাবে ইউক্রেন যুদ্ধে পারমাণবিক উত্তেজনা নিরসন করা যায়, তা নিয়ে এই কর্মকর্তারা আলোচনা করেছেন। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি বিষয়ক কোন আলোচনায় তারা অংশ নেননি।

গত মাসেই সুলিভান বলেছিলেন, পারমাণবিক অস্ত্রের কোনরকম ব্যবহার রাশিয়ার জন্য ‘মারাত্মক বিপর্যয়কর’ হবে। এনবিসি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সাথে গোপন আলোচনার সময় মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, এরকমটা হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে।

ওই খবর নিশ্চিত করার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানিয়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, মানুষ অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলে।সেসময় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ পশ্চিমা গণমাধ্যমকে অভিযুক্ত করে বলেন, তারা অনেক প্রতারণামূলক সংবাদ প্রকাশ করছে। তবে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জেন-পিয়ের সোমবার বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার অধিকার আছে যুক্তরাষ্ট্রের। ইউক্রেনে ‘অবৈধভাবে’ সংযুক্ত করা চারটি অঞ্চল রক্ষায় রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের আশ্রয় নিতে পারে। গত কয়েক মাস ধরে এরকম একটি আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সুলিভান এখনও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। তিনি মনে করেন, মস্কোর সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রভাবিত হওয়া প্রতিটির দেশের স্বার্থের জন্যই ভাল। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি সংবাদে বলা হয়, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে যাতে কিয়েভ খোলামেলা মনোভাব প্রকাশ করে, সেজন্য অনুরোধ করছে মার্কিন কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে কোন আলোচনা হবে না বলে ইউক্রেন যে ঘোষণা দিয়ে আসছে, প্রকাশ্যে সেসব কথা না বলার জন্যও তারা চাপ দিচ্ছে।

কিন্তু সুলিভান বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জবাবদিহিতা আদায় করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাইডেন প্রশাসন। ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব যুদ্ধাপরাধ ঘটেছে, হামলাকারীরা যা করেছে, সেই দায়ীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে তারা একত্রে কাজ করে যাবে। তিনি আরও বলেন, শুক্রবার আমি কিয়েভে ছিলাম। আমার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা আন্দ্রি ইয়ারমাকের আলোচনা হয়েছে। পুতিনের যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে কোন পর্যায়ের মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়েছে সে সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছি তখন।

সাম্প্রতিক মাসগুলিতে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে যে, রাশিয়া পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। একটি গণভোটে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে রায় দেয় ওই অঞ্চলের মানুষেরা। যদিও পশ্চিমারা ঘোষণা দিয়েছে এই গণভোটকে তারা বৈধ বলে স্বীকৃতি দেবে না। ওই অঞ্চল ইউক্রেন যাতে ফিরিয়ে আনতে পারে সে জন্য তারা দেশটিকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দিচ্ছে।