শীর্ষ সন্ত্রাসীর সহযোগী আমির গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর সব তথ্য: রিমান্ড শেষে কারাগারে

ডাক নাম তার মাখন। এলাকায় সবাই চিনে মাখন নামেই। সবাই জানে মাখন ক্লাস ৮ পর্যন্ত পড়েছে। সৌদি আরবে ময়লার গাড়ীতে কাজ করে। দেশে ফিরে হঠাৎ শুরু করে আদম ব্যবসা। আদম ব্যবসায় নানা মানুষের টাকা মেরে আশ্রয় নেয় এক পত্রিকার সম্পাদকের কাছে। তাকে কিছু টাকা দিয়ে বাগিয়ে নেয় সেই পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতির পদ। এই পদ বাগিয়ে নিয়ে আদম ব্যবসার সাথে শুরু করে দখল বানিজ্য। এই সময় পূর্ব পরিচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের সাথে নতুন করে সখ্যতা শুরু হয়। মামুনের সাথে সখ্যতা হওয়ার পরপরই বেপরোয়া হয়ে উঠতে থাকে মাখন। মামুনের চাঁদার টাকা কালেকশান, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মে যুক্ত
হতে থাকে। সেই সাথে শুরু করে ছবি বানিজ্য। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে ছবি তুলে মানুষকে দেখিয়ে নিজের প্রভাব দেখাতে শুরু করে। এমন কি
নিজের ফেইসবুক প্রফাইলের কাভার ফটোতে একজন সেনা কর্মকর্তার ছবি দিয়ে রাখেন।

এই সময় অশিক্ষিত মাখন নিজের একটা পত্রিকা করার চেষ্টা শুরু করেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভুয়া সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে হঠাৎই আমিরুজ্জামান আমির পরিচয়ে একটি পত্রিকার ডিক্লারেশান নেন। হয়ে যান
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক খবরের আলো। পরবর্তীতে মাদক ব্যবসায়ী, সবজী বিক্রেতা, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, পাঠাও চালক সবাইকে দেওয়া শুরু করে পত্রিকার কার্ড। এদের সবাইকে নিয়ে গঠন করে মিরপুর প্রেস ক্লাব। তিনি হয়ে যান সাধারণ সম্পাদক সেই প্রেস ক্লাবের। যদিও মিরপুরে একাধিক মিরপুর প্রেস ক্লাবের অস্তিত্ব রয়েছে।
আমির হঠাৎ সম্পাদক হয়ে শুরু করেন চাদাবাজী। বাড়ী দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম।

মিরপুরের মানুষ অস্থির হয়ে মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। সেই সাথে মিরপুর জুড়ে পোষ্টার ছাপায়, আমিরের অত্যাচার থেকে মুক্তির দাবীতে। আমিরের সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে পত্রিকার ডিক্লারেশান নেওয়ার বিষয়ে ডিসি বরাবর আবেদন করেন। সেই সাথে গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে
বের হয়ে আসে, আমিরের সকল সার্টিফিকেট জাল। যা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক যাচাই করা হয়। এতো কিছুর পরও আমির ছিল ধরা ছোয়ার বাইরে।

অবশেষে, কোর্টের আদেশে পল্লবী থানা মামলা রেকর্ড করে আমিরকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়। ইতিমধ্যে আমিরকে ১ দিনের পুলিশ রিমান্ড শেষে কারাগারে
প্রেরণ করা হয়েছে। আমিরের বিভিন্ন অপকর্মের চাঞ্চল্যকর তথ্য স্থানীয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গ্রেফতারের পরপরই অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে। একই সাথে সকলের মাঝে
আতঙ্কও বিরাজ করছে। জেল থেকে বের হলে আবার আমির কাকে কি করে।

একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায়ও আমিরের
যোগসূত্র রয়েছে। পরবর্তীতে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন গ্রেফতার হলেও, আমির প্রভাব খাটিয়ে মাত্র ৪৫ দিনে জাবিন নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যায়। যার সাথে আমিরের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সাথে যোগসাজসে বিভিন্ন নিরীহ মানুষের জায়গা জবর দখলের অভিযোগ রয়েছে মিরপুরের পল্লবীর শীর্ষ ভূমিদস্যু আমিরের বিরুদ্ধে। আমিরের অত্যাচারে কারনে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেও, তার থেকে পরিত্রাণ মিলে নেই। আমিরকে নেওয়া হয়নি আইনের আওতায়। কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ জীবন নাশের হুমকী দেয় আমির। মামলাবাজ আমির. শুধু মাত্র মামলা দিয়েই নয়, বরং ভূয়া সার্টিফিকেট দিয়ে
পত্রিকার ডিক্লারেশান নিয়ে মানুষকে তথ্য প্রমাণ ছাড়া মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখায়। কেউ তার কথা না শুনলে, তথ্য প্রমাণ ছাড়া যা খুশী তা
লিখে দেয়। যা দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তি যোগ্য অপরাধ। আমিরের ভূয়া সার্টিফিকেট দিয়ে পত্রিকার ডিক্লারেশান নেওয়ার বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। তদন্তে ইতিমধ্যে সত্যতা পাওয়া গেছে বলেও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে আমিরুজ্জামান পত্রিকার ডিপক্লারেশন নিয়েছেন তা ইতিমধ্যে জাল ও সৃজিত বলিয়া প্রমানিত হয়েছে। ভূমিদস্যু আমির পল্লবীর অশিক্ষিত, বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিদের তার পত্রিকার সাংবাদিকের
কার্ড দিয়ে একটি প্রেসক্লাব গঠন করেছে। যার সাথে যুক্ত প্রায় সকলে বিভিন্ন অপকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার মূলকাজ মানুষের বাড়ি-ঘর
দখল করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা।
অবশেষে ভূক্তভোগী এক বাড়ির মালিক বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৫৯ (পল্লবী থানা) তারিখ- ১২/০৮/২০২১ইং।
পল্লবী থানার উপ পরিদর্শক( এসআই) সজীব খান জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পল্লবীর বি ব্লকে আমিরের অফিস থেকে তাকে আটক করা হয়। এই সময় আমির এলাকায় আমির তার দলবল নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এ সময় আমরা গোপন সংবাদের ভিক্তিতে আমিসহ পুলিশে একটি দল নিয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে আমিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার অপর সহযোগীরা পালিয়ে যায়। যদিও পরবর্তীতে আমিরের সহযোগী ফরহাদকেও গ্রেফতারে সক্ষম হই। ফরহাদও
বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষসন্ত্রাসী মামুনের সহযোগী হিসেবে
মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় চাদাবাজি, ভূমিদখলসহ নানা ধরনের অপকর্ম চালিয়ে
আসছিল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি দখলের অভিযোগে রাজধানীর পল্লবী থেকে মো. আমিরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের
পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পল্লবী থানার পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাল
সনদ ব্যবহার করে দৈনিক খবরের আলো নামের একটি পত্রিকার ডিপক্লারেশন নিয়ে তার সম্পাদক ও প্রকাশক হয়েছেন আমিরুজ্জামান। বিষয়টি এখন তদন্ত করছে বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে মিরপুর-পল্লবী থানা এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলদারিসহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগসাজস করে বহু নিরীহ মানুষের জায়গা দখল করেছেন তিনি। কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ
জীবননাশের হুমকি দিতেন আমিরুজ্জামান। শুধু মামলা দিয়েই নয়, তার পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়েও নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন।৷ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সজীব খান
জানান, পল্লবীর এক ভুক্তভোগী বাড়ির মালিক বাদী হয়ে আমিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জব্দ করা হয় তার ব্যবহৃত সেলফোন। এসআই সজীব খান আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঁদাবাজি, দখলদারি, এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে তার যোগসূত্রতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। আমিরুজ্জামান এক দিনের রিমান্ডে অনেক তথ্য দিয়েছে। তার সঙ্গে দেশে ও দেশের বাইরে অপরাধের সঙ্গে জড়িত কার কার যোগাযোগ ছিল, তা খতিয়ে দেখা
হচ্ছে।